ছাত্ররা কেন দল গঠন করবে, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স প্রধান গিডেয়েন র‌্যাচম্যানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেছেন তিনি।

আলোচনার একপর্যায়ে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলার ফাঁকে ছাত্রদের দল গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্ররা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবে। এ লক্ষ্যে তারা দেশব্যাপী নিজেদের সংগঠিত করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা একটা ভালো সময়। কারণ আমি সবসময় জাতির ঐক্য রক্ষা করে চলেছি। আমি এ থেকে বিচ্যুত হতে চাই না। একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন তারা উপদেষ্টা পরিষদ সভা গঠন করছিল, তখন আমি তিনজন ছাত্রকে আমার উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশকে ‘জীবন’ দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদেও বসতে পারবে। এবং তারা কী জন্য জীবন দিচ্ছে তা নির্ধারণ করুক।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারা ভালো কাজ করছে। এখন ছাত্ররা বলছে, কেন তারা নিজস্ব দল গঠন করবে না, আমরা একটা সুযোগ নেব। তারা আরো বলছে, আপনার কোনো সুযোগ নেই। সংসদে আপনার কোনো আসন নেই। কেন? কেউ আপনাকে চেনে না। আমি বললাম, পুরো জাতি তাদের চেনে। তাদেরকে একটা সুযোগ দেয়া উচিত, তারা যা করতে চায়। ‍সুতরাং তারা তাই করবে।’

তিনি আরো বলেন, হয়তো দল গঠনের প্রক্রিয়ায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ, তারা রাজনীতি করতে গেলে সব দলের লোকজনই তাদের দলে আসবে। তখন আমাদের দেশে রাজনীতির যে ধরন, সেখান থেকে তারা নিজেরদ সরিয়ে আনতে পারবে কিনা? যাইহোক, তবুও এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। ছাত্ররা এর জন্য প্রস্তুত। তারা প্রচারণাও চালাচ্ছে। তারা সারা দেশে সংগঠিতও হচ্ছে।

পডকাস্টে উপস্থাপক এক পর্যায়ে বলেন, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের একটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তারা দাবি করছে, বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো সময় পতন হতে পারে আপনার প্রশাসনের। তখন ইসলামপন্থীরা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি এমন কোনো লক্ষণ দেখি না। আমি বলব, তরুণরা এখন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো উগ্রতার সাথে তাদের সম্পর্ক নেই। তারা রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের আখেরও গোছাতে চায় না। শুধু এতটুকু যে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করছে। নিজেদেরকে রাজনীতিতে যুক্ত করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি যে এটি করা তাদের দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যে বিজয় অর্জন করেছে, সেগুলো রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সুযোগসন্ধানীরা এসব অর্জন ব্যর্থ করে দেবে। এটাই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নীতি ও পরিবেশ।’

উল্লেখ্য, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকর গিডেয়েন র‌্যাচম্যানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। ‘র‌্যাচম্যান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টে কথোপকথন লিখিত আকারে আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র : ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস