মুক্তির আবেদন করিনি, মুচলেকা দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি : আমান আযমী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২২
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘গুম’ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তার মুক্তির আবেদন নিয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি বিষয়টিকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘গুম’ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টে আমাকে যারা গুন্ডাদের মতো গায়ের জোরে বেআইনি ও অবৈধভাবে অপহরণ করে বেআইনি ও অবৈধভাবে আটক রেখেছিল তাদের মধ্য থেকে ‘একজন সেনা কর্মকর্তা’র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু আযমী একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, তাই শেখ হাসিনার কাছে তিনি মুক্তি দেয়ার আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই তার আবেদন নাকচ করে হাসিনা।’ কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ‘আমি আবেদন করেছিলাম’ মর্মে বক্তব্যটি সর্বৈব মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা হলো, আবেদন জানাতে হলে ‘সেনা কর্মকর্তা’ কেন, যেকোনো ব্যক্তিই তো আবেদন জানাতে পারেন। আবেদন জানানোর জন্য সেনা কর্মকর্তা হতে হবে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। তাই, এখানে ‘সেনা কর্মকর্তা দেখে আবেদন’ করার বক্তব্যটি হাস্যকর।
দ্বিতীয়ত, আট বছরের বন্দীজীবনে আমি কখনো প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারো কাছে মুক্তির জন্য কোনো ধরনের আবেদন করিনি। এটা সকলেই জানেন যে, আমাকে ডিজিএফআই অপহরণ করে ঢাকা সেনানিবাসের পশ্চিম প্রান্তে কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই কমপ্লেক্সের ভিতরে তথাকথিত ‘আয়নাঘরে’ দীর্ঘ আট বছর প্রাকৃতিক আলো-বাতাসহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দী করে রেখে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে সীমাহীন মানসিক নির্যাতন করেছে। সুতরাং, যদি কোনো সেনা কর্মকর্তা ‘আমি আবেদন করেছিলাম’ মর্মে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ডিজিএফআইয়ের অফিসারই হবেন। আমি বন্দী থাকাকালীন ডিজিএফআইয়ের পাঁচজন ডিজি (যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে) এবং ডিজিএফআইয়ের যেই শাখা আমাকে অপহরণ করে বন্দী করে রেখেছিল সেই শাখার পাঁচজন ডাইরেক্টর ছিলেন। আমি যদি মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে থাকি তাহলে এই ১০ জনের মধ্য থেকে দুই তা তার অধিক অফিসারের মাধ্যমেই তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর কথা।
আমি এই ১০ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমি আবেদন করেছি মর্মে যেই দাবি করা হয়েছে সে ধরনের কোনো দলিল/প্রমাণ আপনাদের কাছে থেকে থাকলে তার মূলকপি জনসম্মুখে প্রকাশ করে আপনাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করুন। আমি জানি আপনারা তা পারবেন না, কারণ আমি কোনো আবেদনই করিনি, এবং এই দাবি শতভাগ মিথ্যা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচারের এক নমুনা।
এছাড়া, যিনি এ দাবি করেছেন, তিনিও যেহেতু ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা, তাই তিনিসহ যেসব কর্মকর্তা আমিসহ আরো যেসব নিরপরাধ ব্যক্তিদের গুম করা, বিভিন্ন মেয়াদে অবৈধভাবে বন্দী রাখা এবং বন্দীদের উপর নির্যাতন করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তারা সকলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের সকলের বিরুদ্ধে চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত বলতে আরো বলতে চাই যে, আবেদন করা তো দূরের কথা, বরং আমি তাদের পক্ষ থেকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। বন্দী থাকাকালীন বিগত ২৩ মে ২০২১ তারিখ বিকেলে সেখানকার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে, ‘আমি দেশে থাকব না, রাজনীতি করব না, নিজের পরিবার নিয়ে বিদেশ চলে যাব’ এই মর্মে একটি মুচলেকা দিলে তারা আমাকে মুক্তি দিতে পারে। আমি সাথে সাথে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছি যে, ‘আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি রাজনীতি করব কি করব না, দেশে থাকব কি থাকব না সেটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চাই না।’ সেই কর্মকর্তা কয়েকবার বললেও আমি আমার বক্তব্যে অটল থাকি।
আমি ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের মিথ্যাচার না করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”