নির্বাচন ছাড়া অন্য পথ খুঁজতে গেলে জনমনে সন্দেহ বাড়বে : আমীর খসরু
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০৯
জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ খুঁজতে গেলে জনমনে সন্দেহের উদ্বেগ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া গনতন্ত্রের অগ্রগতির সুযোগ নেই। গনতন্ত্রের শুরু, অগ্রগতির জন্য একমাত্র নির্বাচন ব্যতিত আর কোনো পথও নেই। অন্য কোনো পথ খুজতে গেলে জনমনে সন্দেহের উদ্বেগ হবে। জনগণ হতাশ হবে, গণতন্ত্র আবারো মুখ থুবড়ে পড়বে।’
রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি-এনপিপি আয়োজিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মনে করে যে তারা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের কী পরিবর্তন হবে, কী সংস্কার হবে- সেটা ভুল হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে তারা। সুতরাং এই দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত চলবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব সংসদ গঠন করতে হবে। এর ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ যদি মনে করে শেখ হাসিনা যেভাবে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়েছিল, শেখ মুজিব বাকশালের মাধ্যমে যেভাবে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়েছিল- তাহলে তার বিরুদ্ধে পুরো দেশের মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল, একটি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদের মাধ্যমে জনগণ তার মালিকানা ফিরিয়ে পাবে।’
বিএনপি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০-এর মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে দু’বারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, এগুলো ছয় বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন। হাসিনা-পরবর্তী যে বাংলাদেশ হবে এটাকে মাথায় রেখে খালেদা জিয়া কথাগুলো বলেছে। এই সংস্কারগুলো দরকার হবে আগামীর বাংলাদেশে। আজকে তারা সেই প্রস্তাবগুলো বলতেছে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা দু’বছর আগেও যুগপৎ আন্দোলন দলগুলোকে নিয়ে ৩১ দফা সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছি। সুতরাং শেখ হাসিনা পতনের পর আগামী বাংলাদেশ কেমন হবে তার প্রস্তাব আমরা আগেই দিয়েছি। সেই কথাগুলো এখন আলোচনা চলছে, নতুন কোনো কিছু নেই। আগামী দিনে বিএনপি জাতীয় সরকারের গঠনের মাধ্যমে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। বিএনপিসহ যুগপৎ শরীকরা ৩১ দফা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আগামী দিনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে পাশ করবে বিএনপি। আর কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি মনে করে তাদের কিছু প্রস্তাব আছে তাহলে তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের মুল কারণ ছিল গণতন্ত্র। যেটা একদলীয় বাকশালের মাধ্যমে কেড়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুলমন্ত্র ছিল বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। বাকশাল বিদায়ের মধ্যে দিয়েও সেই আন্দোলন-সংগ্রাম শেষ হয়নি, বরং অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে আরেক স্বৈরাচার এসে নির্বাচনকে কেড়ে নিয়ে জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে ছিল। তারপর এক-এগারো, আরেক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদের পতনের আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপসহীন ছিলেন খালেদা জিয়া। তার হাত ধরে আবারো বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। তারপর থেকে নিজের জীবনের বিনিময়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন। জেলখানায় ছয় বছর থাকলেও কোনো আপস করেননি তিনি, শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য। সেই আন্দোলন কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আজকে আবারো জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলতে হচ্ছে।’
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মওলা, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহেরসহ ন্যাশনাল পিপল্স পাটি-এনপিপি ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।