‘বাতিঘর, নায়ক-স্থিতিশীলতার বিস্ময়কর প্রতিচ্ছবি’ হিসেবে অভিহিত ড. ইউনূস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৮, আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘আলোকবর্তিকা, বীর ও স্থিতিশীলতার বিস্ময়কর প্রতিচ্ছবি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সভায় যোগদান পর্ব শেষে তিনি ঢাকার উদ্দেশে দাভোস ত্যাগ করেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট ছিল, হাসিনার পতনের পরই ছাত্ররা সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল-তা ছিল অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে রাজি করানো। আর এটাই সব পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।’
শুক্রবার বিকেলে দাভোস সভা শেষ হলে বেশিভাগ বিশ্বনেতা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেতারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যান।
বাংলাদেশের দাভোস মিশন একটি উচ্চ মর্যাদায় সমাপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও তার ছোট দাভোস প্রতিনিধি দল ‘মাথা উঁচু করে’ দেশে ফিরছেন।
অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে ৪৭টি বৈঠক করেছেন।
আলম বলেন, শীর্ষ ইউরোপীয় নেতারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর সংস্কার কর্মসূচিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছেন।
প্রেস সচিব বলেন, বিপ্লব পরবর্তী মাসগুলোতে দেশের সম্ভাবনা ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে শীর্ষ বেসরকারি কোম্পানিগুলো আশ্বস্ত এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দেখে তারা মুগ্ধ।
অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকার নিতে বিশ্বের সেরা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ সাংবাদিকরা ধারাবাহিক চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যম আউটলেটগুলোর অপপ্রচার নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে হয় না। ভারতীয় মিডিয়া তাদের রাজনৈতিক প্রভুদের জন্য যে নোংরা কাজ করে সে সম্পর্কে তারা (দেশের মানুষ) খুব সচেতন।’
আলম বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের টিউলিপ সিদ্দিক কাহিনী শেখ হাসিনার ‘বিশাল ডাকাতির গল্পে কিছু অতিরিক্ত স্তর যুক্ত করেছে। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় কী ধরনের লুণ্ঠন ও লুটপাট হয়েছে, তা পাশ্চাত্য গণমাধ্যম এখন জানে।’
অধ্যাপক ইউনূস তথ্য জালিয়াতি নিয়েও কথা বলেন এবং ‘একনায়কতন্ত্রের’ সময় বিশ্বকে অন্ধ থাকার জন্য দোষারোপ করেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রধান উপদেষ্টার ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ড. ইউনূস ২১ জানুয়ারি দাভোসে পৌঁছে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে চারটি বৈঠক, মন্ত্রী পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে চারটি বৈঠক করেছেন এবং জাতিসঙ্ঘ বা অনুরূপ সংস্থার প্রধান/শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে ১০টি বৈঠক করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা সিইও/উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে ১০টি বৈঠক করেন, ডব্লিউইএফ আয়োজিত নয়টি প্রোগ্রাম এবং চারটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ ও মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ড. ইউনূস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে আরো দু’টি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি আটটি গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান।
ড. ইউনূসের সাথে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সচিব (পশ্চিম) এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রমুখ।
দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় মূল বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের একত্রিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলায় সাড়া দেয়া, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করা এবং ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানি রূপান্তর পরিচালনা করা।
‘কলাবোরেশন ফর দ্য ইন্টেলিজেন্ট এজ’ প্রতিপাদ্যে এই বছরের সভাটি আহ্বান করা হয়েছে এবং প্রোগ্রামটি পাঁচটি ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র। তবে অত্যন্ত আন্ত:সংযুক্ত ধারণাগত অগ্রাধিকারের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।
১৩০টিরও বেশি দেশের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং সব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের ৬০টি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ৩৫০ জন সরকারি নেতা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সূত্র : ইউএনবি