আমলাদের মধ্যে চুরি-দুর্নীতি-ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া কোনো চিন্তা নেই : মির্জা ফখরুল
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪১
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই পরিবর্তনের (৫ আগস্ট) পর যখন আমরা দুয়েকটা জায়গায় খোঁজ-খবর নেই, অফিস আদালতে খোঁজ-খবর নেই, ভয়াবহ কাণ্ড; ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই সরকারি আমলাদের মধ্যে। এটা বলতে আমি বাধ্য হলাম।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার কর্তৃক ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন ও বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কখনো ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম। এইতো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এর মধ্যেই আমরা পাগল হয়ে গেছি সব। আমাদের সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে। ভুল তো করবেই, তারা তো আর সরকারে ছিল না, রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বিষয়টা তারা জানে না, করেনি, ঠিক না? তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তো কেউ একটা কথা বলারও সুযোগ পায়নি, সাহসও কেউ পায়নি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনো লাভ হবে না। ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই, অনেক ত্রুটি আছে, ত্রুটি তো তারা নিয়েই এসেছে, একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার চিন্তায়ও ছিল না, এটা এত খারাপ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এটার পরিবর্তন তো আপনার একদিনে হবে না, এত দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরেন, স্ট্রাকচার আমরা দাঁড় করি, একটা গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার দাঁড় হোক, সেই স্ট্রাকচার হলে নিশ্চয় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
তিনি আরো বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে ধৈর্য ব্যাপারটা ছিল। প্রথমেই তিনি যুদ্ধ শুরু করে দেননি। প্রথমে শুনেছেন, সমস্ত বিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষদের নিয়ে বসেছেন।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময়, হটকারিতা করা যাবে না। অতি বিপ্লবী কোনো চিন্তা ভাবনা নিয়ে সমাজে আরো অস্থিরতা, চরম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা হয়তো কোনভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা বোধহয় ঠিক হবে না, এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মাহবুব উল্লাহ (অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ) ভাইয়েরা থিওরি পড়াতেন, তার মধ্যে একটা কথা ছিল রোমান্টিসিজম। রোমান্টিসিজম মানে শুধু প্রেম নয়, বিপ্লবের প্রতি প্রেম। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি সব পালটে দিবো, এই মুহূর্তে আমি সব দখল করব, অন্যায় রোধ করব, এটা হয় না। আপনাকে ধাপে ধাপে করতে হবে।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এখানে যে অস্থিরতা চলছে, এই অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, আমাদের ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে। এমন কিছু আমরা করব না, যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আরো বিপদ ডেকে না আনি। এই বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একটা কথা আমি আবারো বলি, কেউ ভুল বুঝবেন না। আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? বিশেষ করে ছাত্ররা তো বলেনই। নির্বাচন বলার কারণটা হচ্ছে একটাই, আমি বিশ্বাস করি, আমি জানি না আমার বিশ্বাসটা ভুল কি না, যেকোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটা অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। আমার এক্সেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা আমাদের পড়ালেখা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদম শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একদম শেষ। সেটার মধ্যে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে একদম ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব জায়গায় দেখবেন যে এত নিচে চলে গেছে মান, এটা বলে বুঝানো যাবে না। একেবারে কুড়িগ্রামের চরের মধ্যে যে প্রাইমারি স্কুলটা বা হাইস্কুলে কি শিক্ষা পাচ্ছে সেটার খবর আমরা অনেকেই রাখি না। শিক্ষক নেই সেখানেও আপনারা অনার্স খুলে বসে আছেন! দিনাজপুর গভমেন্ট কলেজে কিছুদিন আগে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, সেখানে অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে। অথচ সেখানে অনার্স আছে, মাস্টার্স আছে। এখন আপনারা বলেন, সে কলেজগুলোর কি দরকার আছে? সেখানে এই যে শুধু আর্টস আর কমার্স আছে। সাইন্স তো নাই। এই যে শুধু বিএ পড়াচ্ছেন তাদের দিয়ে করবেনটা কী? তাদের সমাজে দরকারটা কী? কোনো প্রয়োজন নাই।
তিনি বলেন, সারাদেশে এই যে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার, এটা হচ্ছে একটা বড় সমস্যা। এটাকেও আমরা কেউ চিন্তায় আনছি না। আজকে সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে কিন্তু শিক্ষায় কোনো কমিশন করে নাই। এটা তো আগে প্রয়োজন ছিল। গোটা সমস্যার মূলে এটাই। শিক্ষা ব্যবস্থা যদি ঠিক না হয়, জ্ঞান যদি আমার না থাকে, তাহলে সমাজে কোন পরিবর্তনটা আমি আনতে পারব? নিজের পরিবারের জন্যই বা কি পরিবর্তন আনতে পারব?
জিয়া স্মৃতি পাঠাগাররের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো: জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরে এলাহী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা