১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - ছবি - ইন্টারনেট

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যেটা একমাত্র একটি ইলেক্টেড পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়।’

শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এখানে মহার্ঘ ভাতা মতো স্টেপগুলো নিঃসন্দেহে একটি সমস্যা তৈরি করবে। মহার্ঘ ভাতা তো কিছুটা ইম্প্রেশন (প্রভাব) বাড়াবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের তো কোনো আয় বাড়ছে না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়গুলোকে আপাতত আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বেশি প্রয়োজন ছিল না।

তিনি বলেন, ‘খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকার এমন কিছু উৎস ও উপায় খুঁজে বের করতে পারে যা জনগণের, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ ফেলবে না।’

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্লাবে ইনকাম ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি এবং সারচার্জ তথা ওয়েলথ ট্যাক্স বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায়ের ক্ষেত্রে আরো মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। নন-ট্যাক্স এবং নন-রেভিনিউ খাতে আয় বৃদ্ধি করার দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে বরং ভ্যাটের আওতা বাড়ানো যেতে পারে। নন-ট্যাক্স যেমন নারকটিক্স ও লিকার ডিউটি, মোটর ভেহিকেল ট্যাক্সসেস, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ইত্যাদি এবং নন-রেভিন্যু খাত যেমন ডিভিডেন্ড অ্যান্ড প্রফিটস, ইন্টারেস্ট, অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ফিস, সার্ভিস ফিস, লিজেস, টোলস ইত্যাদি।

সরকার টিআইএন নম্বরধারীদের রিটার্ন সাবমিট এবং কর আদায় নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এটি ইনকাম ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে এবং কর সংগ্রহের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

করযোগ্য আয়কে করের আওতায় নিয়ে আসা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করা এবং রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়াও এটি কর ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ এবং সুবিন্যস্ত করতে সহায়ক হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সরকারি আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ, যা জব্দ করা হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, আইনানুগ পন্থায় সেই অর্থ ব্যবহার করা সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। তাছাড়া যে সকল সরকারি সেক্টরে অব্যবহৃত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তা চিহ্নিত করে ওই সকল অলস অর্থের যথাযথ আইনানুগ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এ মুহূর্তে কালো টাকা উদ্ধারের জোরাল চেষ্টা করা, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে- একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এখন অতীব জরুরি।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কারণে সকলে আশা করছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে তাদের প্রদত্ত কঠিন শর্তগুলো শিথিল করার জন্য বলা যেতে পারে। কারণ বলা হচ্ছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে নাকি কর চাপানো হয়েছে। তাছাড়া দাতাদেশ ও দাতা সংস্থাগুলো কর্তৃক ঘোষিত অনুদান/ঋণের অর্থ ছাড় করানোর ক্ষেত্রেও সরকারকে আরো প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অন্যায়ভাবে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল (করপোরেট ট্যাক্স রেয়াত)। তারা অনেকেই এই অন্যায়ের পথ বেছে নিয়ে অনৈতিকভাবে কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এই অন্যায় ও আর্থিক অনিয়মের পথ বন্ধ করে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারে। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিসর বৃদ্ধি পেত, ঠিক তেমনি শুল্ক করারোপের মতো জনবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত এড়ানো যেত।

বিগত সরকার বৃহৎ ঋণ খেলাপিদের নানা অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণের বোঝা বৃদ্ধি করেছে। মাত্র দুই শতাংশ নগদায়ন করে বৃহদাকার ঋণ পরিশোধের পুনঃনির্ধারণ করে তাদেরকে ঋণ খেলাপির তালিকা মুক্ত করে রেখেছে। সরকারের উচিত এ সকল ঋণ খেলাপি অলিগার্কদেরকে অপরিশোধিত ঋণ পরিশোধে এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাধ্য করা।

বর্তমান ভ্যাট ও রাজস্ব প্রশাসনে পতিত সরকারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। ফলে পূর্বের মতো এই খাতের চলমান অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও দূর্নীতির কারণে রাজস্ব প্রশাসন তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নজিরবিহীন দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। জনগণের কাছ থেকে সহজ পন্থায় পরোক্ষ কর আদায় করে রাজস্ব বৃদ্ধির এনবিআরের অযৌক্তিক পরামর্শ জাতীয় স্বার্থবিরোধী।

এছাড়া কর ফাঁকি রোধ করে এবং কর প্রশাসনের উন্নতি করেও রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়। পরিসংখ্যান বলছে, বিভিন্ন খাতে কর ফাঁকির কারণে বছরে সরকারের প্রায় ৫৬ হাজার কোটি থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি পর্যন্ত রাজস্ব আয় কম হয়। নানা রকমের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কর ফাঁকি রোধ করা যায়। মোট কথা, কর ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি-হয়রানি কমাতে এনবিআরের নিরীক্ষায় অটোমেশন নিশ্চিত করতে হবে।

এনবিআরের বর্তমান কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব নয় এবং গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী লুটেরা গোষ্ঠী ও তাদের দোসর অলিগার্করা জনগণের সম্পদ লুটের অংশ হিসেবে ধনিক শ্রেণীর ওপর আয়করের তুলনায় সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বেশি বসিয়ে রাজস্ব আহরণ করেছে। ছাগলকাণ্ডের দুর্নীতিবাজ মতিউররা এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দোসর হিসেবে সহযোগী ভূমিকা রেখেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পরিণতিতে সমাজে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনীতির অন্যতম মূল উৎস কৃষির ওপর আরো জোর দিতে হবে। প্রতিদিনকার কৃষিপণ্য উৎপাদনে তথা শাকসবজি উৎপাদনে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সকল পতিত জমিই ব্যবহার করতে হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মুলতানে স্পিনারদের দাপট, চালকের আসনে পাকিস্তান ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪০ ঋণখেলাপিদের আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হবে না : মির্জা ফখরুল জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান আড়াইহাজারে একজনকে পিটিয়ে হত্যা গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : জরিপ ইবিতে স্বৈরাচারের সাথে সম্পর্কিত স্থাপনার নাম পরিবর্তনের আহ্বান প্রেস সচিবের ওষুধের ওপর আরোপিত ভ্যাট কমানো হবে : সিলেটে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জের হবে দেশের সম্পদ লুটপাটকারী দেশপ্রেমী হতে পারে না : ড. মিজানুর রহমান

সকল