১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ মাঘ ১৪৩১, ১৬ রজব ১৪৪৬
`

সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র করতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা

রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস - ছবি : বাসস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট ছিল আমাদের ঐক্যবন্ধ হওয়ার প্রতীক। ওই দিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। তাই এখন কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে। কাজেই জুলাই ঘোষণাপত্র সবার মতমতের ভিত্তিতে করতে চাই। তিনি বলেন, এক থাকলে সবাই ভাববে আমরা তো জেগে আছি এখনো। আমরা ভোতা হয়ে যাইনি। আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়নি এখনো, এখনো চাঙা আছে। আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ আছি।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের সাথে দেখা হলে, বসতে পারলে খুব ভালো লাগে। মনে সাহস পাই। কারণটা পরিষ্কার, এ সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মাঝখানে, এটি ঐক্যের দ্বারা সৃষ্টি। যখন আমরা নিজেরা নিজেরা কাজ করি, যখন দেখি একা পড়ে গেছি, আশেপাশে কেউ নেই আপনারা, তখন একটু দুর্বল মনে হয়। যখন আবার সবাই একসাথে কাজ করি, তখন মনের মধ্যে সাহস বাড়ে, মনে হয় একতাবদ্ধ আছি। একতাতে আমাদের জন্ম। একতাই আমাদের শক্তি।’

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝখানে এক দিন ছাত্ররা এসে বলল, তারা একটা ঘোষণপত্র দেবে। আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। বুঝতে চাইলাম কী ঘোষণাপত্র দিচ্ছে, তারা বলল। আমি বললাম, এটা হবে না। আমার চাওয়াটা হবে না, তোমাদের চাওয়াটাও হবে না। তোমরা যদি ৫ আগস্টে ফিরে যেতে চাও, সেদিনের প্রেক্ষাপটে যা হয়েছিল সেটাকে রিক্রিয়েট করতে হবে। একা এটা করা যাবে না। ওই দিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। কেউ বলে নাই তুমি অমুক, তুমি অমুক। কাজেই তোমরা করতে চাইলে সবাইকে নিয়েই করতে হবে- এটা পরিষ্কার। না করলে এটা ঠিক হবে না।’

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সবার মতামতের ভিত্তিতে করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরো বলেন, ‘শুধু ছাত্ররা করলে, যে একতা দিয়ে তোমরা ৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছিলে সেটার অবমাননা হবে। তারা আমার কথায় খুব খুশি হয়নি। কিন্তু ক্রমে তারা বুঝল, ৫ আগস্ট রিক্রিয়েট করতে হলে এভাবে করতে হবে। সেই কথা থেকে এ আলাপ শুরু। আজকের আলোচনা একে কেন্দ্র করেই হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে না পারলে উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে। দরকারও নেই। ঐক্যের মাধ্যমে করলে সবার মনে সাহস আসবে।’

প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘আমি যত দিন আছি, একতা নিয়ে থাকব। কাজেই সেই পথেই আমাদের চলতে হবে। যখন আপনাদের (রাজনৈতিক নেতারা) সাথে বসি, তখন সেই সাহসটা দেন। আজকে আপনাদের দেখে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে। ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে আমরা একতাবদ্ধ আছি। সেই একতাকে কীভাবে মানুষের সামনে প্রকাশ করব, ৫ আগস্টকে রিক্রিয়েট করব, সেটি এখন আলাপের বিষয়বস্তু হবে।’

ঘোষণাপত্রের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেশের সামনে আসতে পারলে তা দেশের জন্য ভালো। আন্তর্জাতিকভাবেও ভালো। সবাই দেখবে যে এ জাতির মধ্যে বহু ঠোকাঠুকি হয়েছে, কিন্তু নড়ে না। স্থির হয়ে আছে, শক্ত হয়ে আছে। একতার বিষয়টি সারা দুনিয়াকে জানাতে চাই, দেশবাসীকে জানাতে চাই।’

বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সাথে একসাথে বসায় সারা জাতি আজ সাহস অনুভব করবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং সুন্দরভাবে এর সমাধানও হয়েছে।’

গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলি স্মরণ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সময় যে যেখানে ছিলাম, তখন আমাদের মনের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা কোনরকম সেই মুহূর্তে ফিরে যেতে পারি কি না, ঐতিহাসিকভাবে মুহূর্তটি যেন হারিয়ে না যায়। ফিরে যাওয়া বলতে বলছি, আমরা কিসের জন্য এটা করেছিলাম, কী উন্মাদনা আমাদের মধ্যে ছিল। সেই উন্মাদনা রেকর্ড করে রাখা, যাতে গোটা জাতি সেই মুহূর্তের বিষয় কী ছিল তা ভবিষ্যতে জানতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেখানে বর্তমানের অনেক কথা এখানে ঢুকাবেন না, অতীতের কথা ঢুকাবেন না। ওই দিনের মুহূর্তে যে আকাঙ্ক্ষা, যে যাতনা, যে উৎসাহ, বিপ্লবী অনুভূতি ছিল, সেগুলো যেন আমরা তুলে ধরি। কিছু বিষয় উচ্চারিত ছিল, কিছু অনুচ্চারিত ছিল, কিন্তু মনের মধ্যে ছিল। কাজেই সেগুলোকে রেকর্ড করা।’

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘যে নামেই এটাকে অভিহিত করেন, সে নামটা বের করতে পারব-আজকে সবাই আমরা সে বিষয়ে একমত হলাম। মূল কথা, আসল জিনিসটা যেন হারিয়ে না যায়। যে জিনিসটা অনন্য হয়ে আছে, সেটাকে আমরা লিখিতভাবে রাখি। এমন না হয় আমরা চলে গেলে কেউ মনে করতে পারল না কী হয়েছিল। এটা কি হঠাৎ করে হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অনেক জিনিস ছিল, যা ওই মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়েছিল।’

বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল ও অংশীজনরা অংশ নেন।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement

সকল