১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬
`

আ’লীগের ক্যাডাররা ছদ্মবেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে : রিজভী

- ছবি - নয়া দিগন্ত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সহযোগী ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা গণঅভ্যুত্থানের সর্বব্যাপী অর্জন ম্লান করে দিতে অস্টপ্রহর তৎপরতায় মগ্ন। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে ছদ্মবেশে। তাদের পালিয়ে যাওয়া গডমাদার হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ শনিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার দুনিয়া কাঁপানো রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে শিশু-কিশোর-নারী-শ্রমিক হত্যাকারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হলেও রাষ্ট্র ও সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা সবকিছু লণ্ডভণ্ড করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত গ্রোথিত হয়েছে। প্রত্যেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের নিচের স্তর থেকে একেবারে উপরের স্তর পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর। তারা সুযোগ খুঁজছে ছোবল মারার। এই দোসররা দিবাস্বপ্ন দেখছে, তাদের প্রভূ ভারত সরকার হাসিনাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে, বাতিল হওয়া ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রোপাগান্ডা করে আবারো কিছু একটা করে ফেলতে পারে। কিন্তু সেই স্বপ্নের গুড়ে বালি। সাত মণ ঘিও পুড়বে না, আর রাধাও নাচবে না।

রিজভী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। তারা এখনো বাজার সিন্ডিকেট দমন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তাতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বাড়ছে সাধারণ মানুষের।

তিনি বলেন, এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেখানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ বা সস, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান-ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পলের ওপর ভ্যাট হার বৃদ্ধি মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষকে আরো চাপে ফেলবে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আপনারা জানেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এখনো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি ব্যবসায়িরা। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতীমূলক। এ ধরনের কর এমন এক সময়ে বাড়ানো হলো যখন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে শুধু নিম্ন আয় ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ নয়; মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন। বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। নতুন করে সঙ্কটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য।

রিজভী বলেন, জনজীবনের নিত্যদুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করেন, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার প্রশ্নটিই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। দুর্ভোগ মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। কারণ জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরা নিজেদের সফল দেখতে চায় কি না, মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির কার্যক্রমের মাধ্যমে সেটি তাদেরই প্রমাণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement