নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবেন না, সরকারকে ১২ দলীয় জোট
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৮
নির্বাচন নিয়ে কোনো টালবাহানা না করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোট নেতারা। তারা অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী স্বৈরাচারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দোসরদের গ্রেফতার এবং বিচার দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার কোনোকিছুই সমাধান করতে পারছে না। সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে বিদায় নিন।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায়। এতে করে দেশের শিল্প-কারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। অতীতে শেখ হাসিনার সরকারও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কলকারখানা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন বর্তমান সরকারকেও কি সেরকমই একটা সরকার মনে করবো? আমি বলবো- আগুনে হাত দেবেন না। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কলকারখানা ধ্বংস করবেন না। মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করবেন না।’
তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘মাইনাস করা’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিয়ে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। অনেকেই তাকে মাইনাস করার কথা বলছেন। কিন্তু এ ধরনের চক্রান্ত দেশের ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিন। ভোটারের বয়স ১৭ এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স করতে চান ২১ বছর। দুটোই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা বলবো- দেশে কচিকাঁচার সংসদ গড়বেন না। আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাঁচ মাস ধরে কিছুই করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা, নিত্যপণ্যের বাজার- কোথাও শৃঙ্খলা আনতে পারছেন না। আমাদের মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না। কারণ আমাদের মাঠে নামার অভিজ্ঞতা আছে। সুনাম রক্ষা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কারো হাতিয়ার হবেন না।’
জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অতঃপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। কিন্তু আজ পাঁচ মাস হয়ে গেলেও সরকার কিছুই করতে পারেনি। আমি বলবো- টালবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচিত সরকার। সেইসাথে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণহত্যাকারী পুলিশ ও প্রশাসনের দোসরদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনুন। মানুষ অক্সফোর্ড আর হার্ভার্ডের সংস্কার বোঝে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘বঙ্গভবন হয়ে উঠছে বাংলার আরেকটি কাশিমবাজার কুঠি। সেখান থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
অবিলম্বে গণহত্যাকারী সকল পুলিশ সদস্য এবং প্রশাসনে গাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিজমের দোসর কর্মচারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মুহিউদ্দীন ইকরাম সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ভাঁওতাবাজির সংস্কার ছাড়েন। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারই হবে সংস্কার। আপনারা জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে পরিণতি কী হয় আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা নিন।’
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, ‘শেখ পরিবারের বিচার করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ফিরে আসতো না। আজও শেখ পরিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই পরিবার দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ সবকিছু ধ্বংস করেছে। এই পরিবারকে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না। শেখ পরিবার বাংলাদেশের জন্য কলঙ্ক। বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রের জননী।’
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া। সেখানে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারকে বলব, অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবেন না।’
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে দেশের চলমান সংকট সমাধান সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনার পতনের জন্য দেশের ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। এখন জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারো মাথাচাড়া দেবে। গরিব মানুষ কিন্তু সংস্কার বুঝে না। তারা চায় দুবেলা দু’মুঠো খেয়ে নিরাপদে বাঁচতে। অতএব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত করতে হবে।’
তারা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট ও দোসররা এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ষড়যন্ত্র করে নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলেছে।’ তারা দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর আহ্বান জানান।
আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শওকত আমিন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির এম এ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ফিরোজ মো: লিটন এবং লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু।