ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের বিচারের দাবি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৫
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ১৪তম দিবস উপলক্ষ্যে এক যৌথ বিবৃতিতে বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ফেলানী হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি ফেলানী খাতুন হত্যার ১৪তম দিবস। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে মারা যান ১৫ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানী খাতুন। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশের বিভীষিকাময় দৃশ্য আজো আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে।
১৪ বছর পরও ফেলানী হত্যার বিচার না হওয়া আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আধিপত্যবাদের নির্মম চিত্র তুলে ধরে। আমরা আর এই ব্যর্থতার দায় বহন করতে চাই না। বাবার হাত ধরে নিজ দেশে ফেরার পথে নির্মমভাবে প্রাণ হারানো ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুন, কিংবা মায়ের সাথে ভাইকে দেখতে ভারতে যাওয়ার পথে ১৪ বছর বয়সী স্বর্ণা দাস, অথবা অবৈধ অনুপ্রেবশের অজুহাতে সীমান্তে বিএসএফের হাতে বিনাবিচারে সকল বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।
যৌথ বিবৃতিতে নেতারা বলেন বলেন, গত ১৫ বছরে সীমান্তে ছয় শতাধিক বাংলাদেশীকে হত্যার খবর বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমে ওঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোর দাবি জানানো হলেও ভারত তাতে কর্ণপাত করেনি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত সম্মেলন বা পতাকা বৈঠকে বার বার গুলি না চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এতে বিগত বাংলাদেশের সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা স্পষ্ট, যা দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ অক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, বিগত ষোলো বছরে ভারত বাংলাদেশকে একপ্রকার উপনিবেশের মতো ব্যবহার করেছে। আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করে ভারতীয় আধিপত্যবাদী আচরণের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তৎকালীন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তাদের অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়া ভারতের সকল অন্যায়কে বার বার প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসএফ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। এই সময়ে আহত হয়েছে আরো ৭৭৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীমান্তে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে। ওই বছর বিএসএফের হাতে মোট হতাহতের শিকার হন ১৭৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক। সেই সাথে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্টস স্যোসাইটির (এইচআরএসএস) রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিএসএফ ৫৭টি হামলার ঘটনায় ২৬ জন বাংলাদেশী নিহত এবং ২৫ জন আহত, গুলিবিদ্ধ ৪৭ ও ১৫৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এ সময়ে ভারতীয় সীমান্তে আরো নয়জন বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে, আজকের বাংলাদেশ সেই আগ্রাসন আর মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। আমরা একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। ফেলানী খাতুনসহ সীমান্তে নিহত সকল বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য আমরা ন্যায়বিচার চাই।
বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক হওয়া উচিত পারস্পরিক সম্মান, ন্যায্যতা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে। আধিপত্যবাদী আচরণ কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের জনগণ তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, সীমান্তে হত্যার স্থায়ী অবসান ঘটানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন। ফেলানী হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করুন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অমানবিক হত্যাকাণ্ড রোধে দু’দেশের মধ্যে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করুন। সীমান্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষাই বাংলাদেশের জনগণের একান্ত দাবি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা