লন্ডনে উপহার পাওয়া ফ্ল্যাট নিয়ে অসত্য বলেছিলেন টিউলিপ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৫, আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:২৬
আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া ফ্ল্যাটের বিষয়ে অসত্য বলায় পদত্যাগের জন্য ক্রমাগত চাপের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং ব্রিটেনের লেবার পার্টির আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফ। অথচ দুই বছর আগে টিউলিপ দাবি করেছিলেন, তার বাবা-মা তাকে এই ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন।
ব্রিটেনের সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য মেইল অন সানডের সূত্রে ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপকে দুই বছর আগে একাধিকবার প্রশ্ন করা হয় যে তিনি কিভাবে দুই বেডরুমের ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জবাবে ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এই প্রশ্ন তোলায় পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
অথচ টিউলিপকে ‘কৃতজ্ঞতা’ স্বরূপ ওই ফ্ল্যাট উপহার দেয়া হয়েছিল বলে লেবার পার্টির সূত্র থেকেও এখন নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত রাতে ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন পদত্যাগ করেন।
গ্রেটার লন্ডনের হ্যারো ইস্টের এমপি বব ব্ল্যাকমান বলেন, ওই সম্পত্তির ব্যাপারে টিউলিপ আগে যা বলেছিলেন সে ব্যাপারে অবস্থান পরিস্কার করা উচিত। এটা না করলে তিনি মন্ত্রী থাকতে পারেন না।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ম্যাট ভিকার বলেন, সরকারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ওঠা অগ্রহণযোগ্য। আর দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরো অগ্রহণযোগ্য।
বিরোধী দলের আরেক এমপি বেন ওবেস-জেকটি বলেন, নতুন এই তথ্য টিউলিপের জন্য আরো বেশি সমস্যাজনক। এখন যখন জানা গেল ওই ফ্ল্যাট কেনা হয়নি বরং উপহার হিসেবে পেয়েছেন; টিউলিপকে আরো বেশি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
গত শনিবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পত্তি’ তিনি টিউলিপকে দিয়েছিলেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর লেবার পার্টির কয়েকজন মেইল অন সানডের সাথে যোগযোগ করেন। তারা বলেন, দুই বছর আগে যখন টিউলিপকে ওই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন যে তারা সঠিক ছিল সে তথ্য যেন প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে টিউলিপ নতুন করে কোনো মন্তব্য না করলেও তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ডেইলি মেইলকে বলেছে, ওই সম্পত্তির মালিকানা পাওয়ার ব্যাপারে টিউলিপ আগে যা বলেছিলেন সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন। তিনি যখন ভুল বুঝতে পেরেছেন তখনই যে সাংবাদিকরা তাকে ওই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন তাদের সঠিক তথ্য পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিটেনর ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রের সূত্রে ডেইলি মেইল জানায়, টিউলিপ যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ থেকে এমএ ডিগ্রি পাওয়ার বছর ২০০৪ সালে কিংস ক্রস এলাকায় একটি ভবনের চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাট পান। তখন তার বৈধ আয়ের কোনো উৎস ছিল না। ওই ফ্ল্যাটের বিপরীতে কোনো মর্টগেজ বা দাম পরিশোধ করা হয়নি। শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর করা হয়।
আব্দুল মোতালিফ ২০০১ সালে এক লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। এর পরের বছর এপ্রিল মাসে টিউলিপের কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কীভাবে ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন। তখন লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ইমেলে দেয়া জবাবে বলা হয়, ‘২০ বছর আগে টিউলিপের বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ হয়, তখন তারা তাদের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করে দেন। সেই অর্থ দিয়েই কিংস ক্রস এলাকায় তাকে ফ্ল্যাট কিনে দেয়া হয়। এই অর্থ অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে এমন কোনো ইঙ্গিত সম্পূর্ণ ভুল এবং মানহানিকর।’
টিউলিপের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করার দাবির বিষয়টি নিয়েও তখন অনুসন্ধান চালায় মেইল অন সানডে। তারা জানতে পারে, ২০০২ সাল বা এর আগে টিউলিপের পরিবার কোনো বাড়ি বিক্রি করেনি। এরপর জুলাই মাসে আবারো টিউলিপ ও লেবার পার্টিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।
টিউলিপের পার্লামেন্টারি অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো এক ইমেইল জবাবে বলা হয়, ‘যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভুল এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব তথ্য কোনো লেখায় প্রকাশ করার পরিকল্পনা করা হলে টিউলিপ আইনি পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না। আগেই বলা হয়েছে, টিউলিপের বাবা-মায়ের পরিবারের বাড়ি বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ওই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে।’
টিউলিপ এই কথা বলার পর তখন আর প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি মেইল অন সানডে।
সূত্র : ডেইলি মেইল, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও অন্যান্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা