০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি, ছাত্র সংসদ কি খুব দরকার

ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি, ছাত্র সংসদ কি খুব দরকার - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হলেও ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি ও নির্বাচনের সুযোগ’ নিয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের মতবিরোধ বাড়ছে।

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো কয়েক দশক ধরে ‘শিবিরকে অবাঞ্ছিত কিংবা নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে রাখলেও গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সক্রিয় হতে শুরু করেছে শিবির।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও নির্বাচন হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস অনুযায়ী। কোনো একটি সংগঠনের জন্য আলাদা রুলস হতে পারে না।’

আবার ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত কিন্তু নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় যে ৭৩-এর অধ্যাদেশ এর ভিত্তিতে সেটি যুগোপযোগী করতে হবে।

‘মাত্রই ক্যাম্পাস খুলেছে। শিক্ষার্থীদের বুঝার জন্য সময় দিতে হবে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে,’ বলছিলেন তিনি।

ওদিকে শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের সমর্থিত জাতীয় নাগরিক কমিটি আগেই বলেছেন যে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো শুরু হওয়া উচিত বলে তারা মনে করে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে।

যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক রোবায়েত ফেরদৌস বলছেন, ছাত্র সংসদের সত্যিকার সুফল পেতে হলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বের ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নগুলোর মডেল অনুসরণ করা উচিত।

‘রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসবে না, এগুলো দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই নির্বাচনে তখনকার ছাত্রলীগ সভাপতিকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের বর্তমান নেতা নূরুল হক নুর।

ছাত্র সংসদ কী খুব দরকার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ সবসময় ‘মিনি পার্লামেন্টের’ ভূমিকা পালন করে।

‘ছাত্রদের অধিকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই ছাত্র সংসদের মাধ্যমে ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমেই তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেটে এর মাধ্যমেই প্রতিনিধি পাঠায় শিক্ষার্থীরা,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি সায়মা হক বিদিশা বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

‘এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অপরিসীম,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯০ সালে। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনই দেয়া হয়নি।

দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এরপর সেখানেও আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর ফোরাম পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন ক্যাম্পাসে রাজনীতির জন্য অযোগ্য। যদিও গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ইসলামী ছাত্র শিবির ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ক্যাম্পাস পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনার জন্য যেসব সংগঠনকে ডেকেছিলেন তার মধ্যে শিবিরও ছিল। যদিও কয়েকটি বাম সংগঠন এর বিরোধিতা করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সক্রিয় বাইশটি ছাত্র সংগঠন শিবিরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গত মাসেই সেখানকার প্রশাসনের ডাকা বৈঠক বয়কট করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলছেন, জাকসু নির্বাচন তারা দ্রুত আয়োজন করতে চান কিন্তু এজন্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ছাত্র সংগঠনগুলোকেই।

‘ছাত্র সংসদে যখন শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে তখন তারা একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই ছাত্র সংসদ তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে,’ বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক রোবায়েত ফেরদৌস বলছেন ছাত্র সংসদগুলোই দেশের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ আইন প্রণেতা তৈরির ক্ষেত্র হয়ে উঠার কথা।

‘নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাত্র সংসদে বিতর্ক করতে শেখে, নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। কিন্তু বর্তমান কাঠামোতে সেটি সম্ভব হবে না। তাই বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ইউনিয়নের যে মডেল বাংলাদেশে এখন সেগুলো অনুসরণ করা দরকার,’ বলছিলেন তিনি।

তার মতে লিডারশিপের একটি কোয়ালিটি তৈরির জায়গা হলো ছাত্র সংসদ কিন্তু বাংলাদেশে যে কাঠামোতে এটি আছে সেটি পরিবর্তন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের উঠে আসার পথ তৈরি করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

‘ছাত্র সংসদ যেন দলীয় স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত না হয়। যোগ্যতা ও বিতর্কে মেধাবীরা যেন নিজেদের শাণিত করে দেশের নেতৃত্বের উপযোগী করে নিজেরে তৈরি করতে পারে সেই সুযোগ দিতে হলে ‘হল ও দলভিত্তিক ছাত্রসংসদের’ কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রসঙ্গত, এতদিনের বিদ্যমান কাঠামোতে ছাত্র সংসদে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নিজেদের প্যানেল ঘোষণা করে। আবার প্যানেলের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। শিক্ষার্থীরা প্রতিটি পদের বিপরীতে যেকোনো প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারেন।

কিভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি সায়মা হক বিদিশা বলছেন, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ডাকসুর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।

‘এই কমিটিই দেখবে গঠনতন্ত্রের কোথায় কোথায় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে হবে। তার ভিত্তিতে সবার সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো,’ বলেন তিনি।

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলছেন, নির্বাচিত ডাকসুতে চাইলে ভিসি বাতিল করতে পারেন- গঠনতন্ত্রের এসব অগণতান্ত্রিক বিধান বাতিল করতে হবে।

অন্যদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ জানুয়ারি ও ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও ২৫ জানুয়ারিতে নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়ন করা হবে ও আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

‘আমাদের দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু এখানে অনেকগুলো রাজনৈতিক বিষয়ও আছে। ফলে সব সংগঠনের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সুন্দর পরিবেশ জরুরি। আমি আশা করি, তারা সেটা নিশ্চিত করবেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

ধারণা করা হচ্ছে যে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গতি এলে দেশের অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও সারাদেশের কলেজগুলোতেও নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মিরপুরে মোটরসাইকেলের গ্যারেজে আগুন যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের আহ্বান অর্জিত বিজয় অর্থবহ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : জামায়াত আমির বিমানবন্দর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আটক ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে জোরাল অভিযানের সিদ্ধান্ত বিআইআইএফ’র হিউম্যান ক্যাপিট্যাল ফর ফিনান্সিয়াল শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সব দলের জন্য ভালো হবে : চরমোনাই পীর ঢাকায় আসছেন ইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের নতুন সংস্করণ চালু করল বিডা ফেনীতে ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ রশিদের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সিরিজ জিতল আফগানিস্তান

সকল