রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে যথাযথ সংস্কার করে নির্বাচন হওয়া উচিত : হামিদুর রহমান আযাদ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৬, আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৩
কক্সবাজার-২ আসনের (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে বিগত সরকার দেশকে জেলখানায় পরিণত করেছিল। জনগণের বাক:স্বাধীনতায় রুদ্ধ করা হয়েছে; ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাক:স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে যারা কথা বলেছে তাদেরকে গায়েবি মামলার, ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে অত্যাচার নীপিড়ন করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। তবে ছাত্রজনতার অভূত্থানে গত ৫ আগস্ট সেই জালিম সরকার দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এই মহান গণঅভূত্থানের পর মানুষের প্রবল আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। যার দরুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণ দাবি দাওয়া তুলে ধরেছে। তাদের এই আন্দোলন দেখেই বোঝা যায় গত ১৫ বছর কতটা নিরুপায় ছিল জনগণ। তাই রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে যথাযথ সংস্কার করে নির্বাচন হওয়া উচিত ।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিউটে ঢাকাস্থ দ্বীপ উপজেলা মহেশকালী-কুতুবদিয়া ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি কীভাবে ইনক্লুসিভলি এই আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীসহ দেশের সবশ্রেণির মানুষ। একজন মা তার দেড় বছরের শিশুকে নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে শরীক হয়েছে। গত জুলাই আগস্টে ছাত্রজনতা যেটা করে দেখিয়েছে সেটা গত ১৫ বছরে আমরা রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারিনি। কিন্তু কিছু দল এ আন্দোলনকে নিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে পলিটিসাইজড করতে চেয়েছে, আমরা বাধা দিয়েছি। ছাত্রজনতার ডাকেই সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের আন্দোলনকে পলিটিসাইজড করা ঠিক নয়। আমাদের সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। মানবিক মর্যাদার প্রতিষ্ঠা,বৈষম্যমূক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল তার বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগীতা করার কারণ উল্লেখ করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সহযোগীতা করার বেশ কিছু কারণ ছিল। পাকিস্তান গঠনের সময় জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, আবেগের বশে যে পাকিস্তান স্টেট গঠন হচ্ছে এ রাষ্ট্র টিকবে না। এটি ভেঙে ভারতের সাথে মিলিত হবে। তাদের ইচ্ছা এটি ছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভারতের একটি স্টেটে পরিণত হবে। তবে এই দেশের বীর জনতা সেটা হতে দেয়নি। তবে যে লক্ষ্য নিয়ে জনতা দেশ স্বাধীন করেছিল সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকে পূরণ হতে দেয়া হয়নি। যার কারণে এই জুলাই অভ্যুত্থান। যদি স্বাধীনতার পরপরই যদি সংবিধান রচিত হত তাহলে ইতিহাস বিকৃত হত না। আজ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সেটাকেই পুজি করে ফ্যাসিস্ট এদেশের জনগণের ঘাড়ের উপর চেপে ছিল।
ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিভক্তির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। এটিই জাতির উন্নতি বাধা দাঁড়িয়ে দিয়েছে। আমরা জনগণের স্বার্থকে পিছনে ফেলে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধীকার দিয়েছি। যার কারণেই আজ এত দুর্নীতি। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একজন ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনো বাকি আছে। ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসার সব নস্যাৎ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র নির্বাহী অফিসার এ এম শহিদুল এমরান সভাপতি হিসেবে হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন মাহফুজুর রহমান। এছাড়াও সূধীবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহেশখালী সমিতির সভাপতি আব্দুল শুকুর সিআইপি, ছাত্রপ্রতিনিধি আশরাফুল্লাহ খানসহ আরও অনেকে।
মতবিনিময় সভায়, মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপজেলার ভাগ্যন্নোয়নে বেশকিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরেন আলোচকরা। যেমন: বেড়িবাদ নির্মাণ, পলিটেকনিক কলেজ প্রতিষ্ঠান, মেধাবৃত্তি চালু, জনদুর্ভোগ নিরসনে রোডম্যাপ তৈরি। শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে কাজ করা, পারাপারের জন্য সেতু নির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, স্থানীয় কৃষকদের প্রোডাক্ট কৃষি অফিস প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসার জন্য ভাল মানের হাসপাতাল নির্মান, পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ করা, লবন শিল্প বিকশিত করা, মৎস শিল্পকে সমৃদ্ধ করাসহ পান চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত কীটনাশক, সার সরবরাহ করা ইত্যাদি।