২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আন্দোলনের শহীদ ও আহতরা আমাদের জাতীয় সম্পদ : জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদ ও আহতরা জাতীয় সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের স্মৃতিচারণ’ প্রেরণার গণঅভ্যুত্থান-২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও আশানুরূপ চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারদের কাছে গেলে এবং আহতদের পাশে গেলে তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের জন্য যেই ভূমিকা রেখেছে অন্যকোনো দল এমনকি রাষ্ট্রও তা করেনি, করতে পারেনি।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘এই আন্দোলনের বীরদের জামায়াতে ইসলামী দলীয় সম্পদ বানাতে চায় না। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে আন্দোলনের শহীদ ও আহত সকল বীর আমাদের জাতীয় সম্পদ।’

জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম কাজ হবে শিক্ষিত জাতি গঠন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিগত সরকারের তৈরি শিক্ষানীতিতে কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী তৈরী হয়েছে। যেই শিক্ষা মানুষকে মানবিক ও আদর্শবান করে না, সেটি কখনো শিক্ষা হতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানদের গণভবনে ডেকে নির্দেশ দিয়েছে যত মানুষ মারার দরকার হয় মারতে। তবু তার ক্ষমতার গদি লাগবে, রাখতে হবে। মানুষ যখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে তখনই এমন অমানবিক কথা বলতে পারে, নিদের্শ দিতে পারে। এক ব্যক্তি বা এক দলের ক্ষমতায় অতিতের সব সরকারকে হিংস্র করে তুলেছে। তারা ক্ষমতার লিপ্সায় মানুষ হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী এক ব্যক্তি বা এক দলের ক্ষমতায় বিশ্বাসী নয়। জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রকামী সব দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে চায়। যেখানে একক কোন ব্যক্তি বা দলের ক্ষমতা ও প্রভাব থাকবে না। এমন একটি সরকার গঠন হলে জাতি সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। একজন নাগরিক তার প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার পাবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় রাজধানীর পল্টনের এক কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের চেতনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৯৪১ সাল থেকেই লালন ও ধারন করছে। এই চেতনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে। জনগণ সেই সুযোগ দিলে জামায়াতে ইসলামী ছাত্র-জনতার উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান বাস্তবায়ন করবে। ইনসাফ, ন্যায় বিচার, মানবিক সমাজ গঠন করতে তিনি জামায়াতে ইসলামীকে একবার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের চিকিৎসা সহয়তা এবং শহীদদের পরিবারকে আর্থিক দু’লাখ টাকা করে সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী কিছুটা দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে। শহীদ পরিবারদের সাথে পূর্বে মতবিনিময় করে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আমরা জানতে পেরেছি। আজ আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে তাদের আগামী দিনে আশা-আকাঙ্ক্ষা জেনে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর এই আয়োজন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চায় একটি বৈষম্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার মুক্ত কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে। এজন্য তিনি দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশাজীবি দেশপ্রেমিক নাগরিকদের জুলাই বিপ্লবের চেতনায় প্রত্যাশীত নতুন বাংলাদেশ গড়তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন নিজ ঘরের বেডরুমে গুলিবিদ্ধ দুই বছর বয়সী রাফসানের মা, প্লাম্বার মিস্ত্রি আল-আমীন, জাফরুল হাসান, অটোরিকশা চালক আল-আমীন, লাশ গোসল দানকারী জামাল হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম, মো: মাহবুব, মো: মেহেদী হাসান শুভ, বেলাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, পরিবহন শ্রমিক নুরে আলম, মহি উদ্দিন রাব্বি, নাহিদ হাসান, নারী শ্রমিক পারভীন, মো: আশরাফুল ইসলাম, দোকানকর্মচারী মো: ইউসুফ, টাইলস মিস্ত্রি শাহ আলম, মো: শিফায়েত হোসেন আসিফ, আল-আমীন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: আবু তাহের, বনশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আ. ন. ম সামিত, এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শারমিন রহমান, খিলগাঁও উত্তর এলাকার মো: নেছার উদ্দিন নাঈম প্রমুখ।

স্মৃতিচারণকালে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করিনি, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যাদের নেতৃত্বে ও আহ্বানে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি তারা আন্দোলন পরবর্তী শহীদ পরিবার ও আহতের থেকে দূরে সরে গেছে।

কেন আহতদের চিকিৎসা না করে ঢাকা মেডিক্যাল ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, আহতরা মারা গেলে বলা হয় আগামীকাল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে নেয়া হতো! মরার আগে কেন বিদেশে নেয়া হয় না? বক্তারা গণহত্যার অপরাধে খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, শামসুর রহমানসহ মহানগরীর নেতারা ও সাংগঠনিক ইউনিটের দায়িত্বশীলসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement