রাজনৈতিক দল না, ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের পিছনে লাগুন : ডা: জাহিদ
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪০
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক দলের পেছনে লাগার দরকার নাই। আপনারা আপনাদের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের পেছনে লাগুন। তাদের প্রশাসন এবং আপনাদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেন।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব) আয়োজিত ‘বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা: প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষের অধিকার দ্রুততার সাথে ফেরত দেয়ার চেষ্টা করুন, তাহলেই মানুষ আপনাদের সাধুবাদ জানাবে। ইতিহাস আপনাদের ধারণ করবে।
তিনি বলেন, যতই হম্বিতম্বি করুক, হিটলারও ফেরত আসে নাই, তার বংশধররাও ফিরে আসে নাই। লক্ষণ সেনের গোষ্ঠীরও কেউ ফিরে আসে নাই। পতিত স্বৈরাচারও বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নাই।
বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলন, আমরা বলি না তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপি রাজনীতি করে। বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করে। কাজেই আজকে যারা বলার চেষ্টা করেন, আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল, এইটা, ওইটা। আমরা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল জনগণের অধিকার আদায় করা। সেটিই হচ্ছে বিএনপির দাবি। সেজন্যই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ভাইয়েরা আন্দোলন করেছেন, আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। শহীদ আবু সাইদ, মুগ্ধসহ দুই হাজারের মতো ছাত্র-জনতা, শিশু, আমার ভাই-বোনেরা শহীদ হয়েছেন, বিএনপিরও ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আজকে ঐক্যের প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
ভারতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের ভাইয়েরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও কোন কোন টেলিভিশনে তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। তারা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করেছে। আপনাকে, আমাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অস্ত্র লুটপাট করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে লক্ষ লক্ষ তাদের দলীয় কর্মী নিয়োগ দিয়ে দলীয় বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছিল।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দেশবাসী, পৃথিবীর মানুষের আস্থা আছে। সরকারকে সহযোগিতা করছে দেশের মানুষ একদম নিঃশর্তভাবে; কাজেই তাদের (সরকার) সিদ্ধান্ত হতে হবে আরো বলিষ্ঠ, আরো দ্রুততার সাথে। তা না হলে ওই সমস্ত স্বৈরাচারের দোসররা, যারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে আছে, তারা কিন্তু ফণা তোলার জন্য, আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে, করবে, করতেই থাকতে হবে। তাদের বিষ দাঁত যদি ভেঙে দিতে আইডেন্টিফাই করুন।
তিনি আরো বলেন, আজকে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ নিয়ে বন্ধুদের মনে রাখতে হবে যে ঐক্য ভাঙনের চেষ্টা করা যাবে না। জাতি ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে, জাতি যদি তার ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হতো, তাহলে আমরা সবাই ব্যর্থ হতাম। ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তার জন্য যেটা প্রয়োজন, কমন শত্রু আইডেন্টিফাই করুন এবং দ্রুততার সাথে জনগণকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দেন। জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে দেশ কোন পথে যাবে, কাদের ধারণ করবে এবং আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।
ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা আজকে অনেক ন্যারেটিভস, অনেক কথা শুনি। সব কথা শুনব, চিন্তা করব, তারপর কমেন্টস করব, তাহলে ভুল কম হবে। আর যদি আপনি নাই শুনেন, চিন্তা না করেন, তাহলে ভুল হয়ে যাবে। কাজেই আমরা যখন শুনি, ৫৩ বছরে সংস্কার হয়নি, তখন আমাদের মনে কষ্ট লাগে। কারণ যিনি বলেন, তার বয়স ৫৩ হয়নি। বাংলাদেশের সংস্কারের যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া তিনি জানেন না অথবা স্বীকার করতে চাননি অথবা বুঝতে পারেননি।
জেটেব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো: ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এবি এম রুহুল আমীন আকন্দ। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।