২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে : জামায়াত আমির

কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেনি। নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কেরানীগঞ্জে ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৭ বছর জাতি ফ্যাসিবাদের অধীনে ছিল। ফ্যাসিবাদের যখন পতন হয় তখন মজলুম মানুষ আর তাদেরকে গ্রহণ করে না। দেশের বুকে তখন তাদের থাকার সৎ সাহস হয় না। মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা পালিয়ে গেছে। এর পরে যারা এসেছিল তারাও পালিয়ে গেছে। যারা অসংখ্য অপকর্ম করে, তাদের নৈতিক কোনো সাহস থাকে না মানুষের সামনে দাঁড়ানোর। তারা পালায়। তাদের পতন হয় অত্যন্ত অপমানজনকভাবে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ একটি পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছে। সমাজ বৈষম্যে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বিগত ১৭ বছরের জঞ্জালের একটিও এখনো যায়নি। কেন? স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কেন মুক্ত হতে পারলাম না। এর জবাব ১৮ কোটি মানুষের সামনে আছে। আমাদের দু’ হাজারের মতো সন্তান জীবন দিয়েছেন। আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছিল, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও জুলুম বন্ধ করতে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি কি বন্ধ হয়েছে? হয়নি। তা বন্ধ করতে হবে। থামাতে হবে। আমাদের সন্তানরা কারো ফলস জমিদারি তৈরি করার জন্য রক্ত দেয় নাই। চাঁদাবাজি ও দখলবাজীর চেয়ে ভিক্ষা করা উত্তম বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ জন্য সরকার সহযোগিতা চাইলে জামায়াত সহযোগিতা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। সকল অফিস বন্ধ করা হয়েছে। অসংখ্য নেতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে। অবশেষে নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরা ধৈর্য ধরেছি। আল্লাহ ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে আমাদের নেয়ামত দিয়েছেন।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আল্লাহ আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে আমরা সেবক হব। মালিক হব না। আমরা অতীতে প্রমাণ দেখিয়েছি। বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাসে আমাদের দু’জন মন্ত্রী এমন ছিলেন তাদেরকে টেলিস্কোপ দিয়ে কোনো দুর্নীতি ও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। তাদের দু’জনের চার হাতের ২০টি আঙ্গুল ছিল পরিচ্ছন্ন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিবেশীর হক নষ্ট করতে চাই না। কোনো প্রতিবেশীর প্রতি অন্যায়ের ও জুলুমের হাত বাড়াতে চাই না। সন্ত্রাসীর হাত বাড়াতে চাই না। আমরা এটাও অপছন্দ করি, কেউ যেন আমাদের দিকেও হাত না বাড়ায়। আমরা কখনো এটা বরদাশত করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। জামায়াতই একমাত্র দল, যারা কখনো কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাই। যারা আল্লাহকে সেজদা দেয় তারা অন্য কারো কাছে মাথা নত করে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার যারা আছেন তারা নিজেরা ক্ষমতায় বসেননি। তারা বিপ্লবের ফসল। তাদেরকে মজলুম জনগণ এখানে বসিয়েছেন। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে স্বচ্ছ থাকুন। জনগণকে হতাশ করবেন না। দু’ নম্বর আহ্বান, যা কিছু ন্যায্য ন্যায়সঙ্গত তা কোনো সংকোচ ছাড়াই করে যান। জনগণ আপনাদের পেছনে আছেন। দেশ হোক বিদেশ হোক কারো কোনো চাপ ও চোখ রাঙানিকে পাত্তাই দেবেন না। কিন্তু এগুলোকে পাত্তা দিয়ে জনগণের আমানত নষ্ট করলে জনগণও আপনাদেরকে ছাড় দেবে না। জায়গায় জায়গায় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেয়া যাবে না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সাড়ে ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছি। জাতির স্বার্থে আরেকটু ধৈর্য ধরার জন্য প্রস্তুত আছি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের ভেতরে অস্থিরতা নেই। ক্ষমতা হলো আমানতের বিষয়। সাড়ে ১৭ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে তা দূর না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যেনতেন নির্বাচন চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা লাঠি ও মানি প্রভাবিত কোনো নির্বাচন চাই না।’

তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরাও জুলুমের শিকার হয়েছেন। আশা করি, মজলুম হিসেবে তারা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করবেন। যৌক্তিক সময়ের চেয়ে একটি মিনিটও বেশি নেবেন না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছরের শেষে ও পরের বছরের মাঝখানে নির্বাচন হতে পারে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আর তিনি নির্বাচনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেননি। আমরা বলব সংস্কারকে শিগগিরই এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণাটাও দিয়ে দিন। আজকেই দাবি করছি না, তবে ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হবে। এ সরকার আবার মইন সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় সবার অভিলাস প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাদের দায়িত্ব হবে এ সরকার থেকে চলে যাওয়া। তারা সরকার থেকে চলে গিয়ে দল গঠন করলে সেটি হবে স্বচ্ছতা। কারণ এ সরকারে দলবাজ কেউ থাকুক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই, এটা হোক জনমানুষের সরকার। এরপরে জনগণের ভোটে যারা আসবে তারা হবে দলীয় সরকার। দলীয় সরকার আসবে কিন্তু দায়িত্ব পালন করবে জনগণের।’

বাজার সিন্ডিকেট সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘এখনো সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও ভাঙতে হবে। যদি হাত বদল হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ করে দেয়া হোক। তারা জনগণের দুশমন। এদেশের মানুষ আর কারো ভাড়াটিয়া হবে না। মানুষ সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।’

তিনি ইসলামী দলগুলো সর্ম্পকে বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ইসলামী দলগুলো। হেফাজতের নেতাকর্মীদেরকে কীভাবে হত্যা করেছে জনগণ তা দেখেছে। ৫ আগষ্টের পর চার দিন কোনো সরকার ছিল না। এই চার দিন ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা জনগণকে পাহারা দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে। ইসলামী দলের নেতকর্মীরা কোথাও কারো কাছে চাঁদাবাজি করে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।’

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবাই সমান অধিকার পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারীরা সবাই সম্মান পাবে। কারো ওপর কোনো পোশাক চাপিয়ে দেয়া হবে না। একটি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন হবে। তিনি নেতাকর্মীদেরকে সকল কাজ সহিহ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা, জ্ঞান অর্জন করা, সকল চ্যালেঞ্জ আল্লাহর ওপর ভরসা করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবেলা করার জন্য তৈরি হতে আহ্বান জানান।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, ‘অন্যায়-অবিচার বন্ধ করতে চাইলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে পারে এক মাত্র ইসলাম। সকল তন্ত্র মন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে আজানে শব্দে। তারা কোরআনের শাসন চায়। কোরআনের শাসন কায়েম হলে মানুষ মুক্তি পাবে। নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখনো স্বৈরাচার তাদের হাল ছেড়ে দেয়নি। এদেশের জনগণকে অতন্ত্র প্রহরীর মতো দেশ পাহারা দিতে হবে যাতে করে ওরা আর ফিরে আসতে না পারে।’

ঢাকা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আফজাল হোসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমির আব্দুল জাব্বার, নরসিংদী জেলা আমির মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন, মুন্সিগঞ্জ জেলা আমির আজম রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ শাহিনুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল