আ’লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে জেলা-উপজেলায় কর্মসূচি করা হবে : নুর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৩
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ জেলা-উপজেলায় কর্মসূচি পালন করবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসু সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভাজন শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় সরকার ছাড়া এ সরকার ছয় মাসও টিকবে না।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হাতিরঝিলে ঢাকা মহানগর উত্তর গণঅধিকার পরিষদের গুলশান জোনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভার শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘ এক দিন তার মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে জুলাই বিপ্লবে হাত-পা হারানো কয়েকজনের সাথে দেখা হয়েছে। আমাদের অফিসে অনেকে আসেন, যাকে জিজ্ঞেস করি কেউ চিকিৎসা ও সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে না। যাদের রক্ত, হাত-পা, চোখ হারানোসহ ত্যাগের কারণে আজকের এ পরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সেই বিপ্লবীদের খোঁজখবর নিচ্ছে না, সহযোগিতাও করছে না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য ও দুঃখজনক। বারবার আহত, নিহতদের সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণের কথা বললেও সরকারের কানে পানি যাচ্ছে না। সরকারকে স্থিতিশীল করার জন্য শুরুতে দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপকে আন্দোলন না করতে আমরা নিষেধ করেছি, অনেককেই থামিয়েছি। কিন্তু সরকার এখন আমাদের কথা শুনছে না। তাই আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে আহতদের অর্ধকোটি ও নিহতদের এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া না হলে জানুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না। আমরা বারবার বলেছি, বিপ্লবের পরে প্রতি বিপ্লবের ঝুঁকি থাকে, বিপ্লব নস্যাৎ করতে অনেকে ষড়যন্ত্র করে, জাতীয় সরকার গঠন করে এ সঙ্কট মোকাবেলা করুন।’
তিনি বলেন, ‘তারা পরিচিত সার্কেল, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন। যা গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের হতাশ করেছে। চার মাসেও দেশে স্থিতিতিশীলতা আসেনি।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খাঁন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে উপদেষ্টা পরিষদে সকল বিপ্লবীদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মরে যাওয়া আন্দোলনকে জীবিত করেছে। যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলন না হলে হাসিনার পতন হতো না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে সর্বপ্রথম হল ছাড়া করেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যায়িত হলো না। এটা কখনো বিপ্লবের চেতনা হতে পারে না। উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের শুরুতেই ইনক্লুসিভ সমাজব্যবস্থা হোঁচট খেয়েছে। আন্দোলন কি দু’ একটি সংগঠন করেছে? বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো, সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা করে নাই? কিন্তু আজকে সবার অবদান অস্বীকার করে একটি গোষ্ঠী নিজেদের গণঅভ্যুত্থানের চেতনার ধারক বাহক দাবি করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের সহযোগিতা নিয়ে কিংস পার্টি গঠনের পায়তারা করছে। কিন্তু সরকারের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে একটি পার্টি গঠন জনগণ গ্রহণ করবে না। এখন পার্টি গঠনে সময় ব্যয়ের চেয়ে রাষ্ট্র সংস্কার বেশি জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল পালিয়ে গেল, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের একজনও আটক হয়নি। এখনো শহীদ পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি, শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি হয়নি। তাহলে একাত্তরের মতো ২৪-এর সঠিক ইতিহাসও জাতি জানবে না? দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক নাই। চাঁদাবাজি, মারামারি চলছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাক চেয়ে আছে। গত ১৫ বছরে বা বিপ্লবে তার অবদান কি? এমন লোক কীভাবে বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হয়? যেসকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে না, তাদের কোনো বেতন দেয়া যাবে না। যারা কাজ করবে, শুধু তারাই বেতন পাবে। তাহলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। ৭১-এর পর ক্ষমতা যেভাবে বেদখল হয়ে স্বাধীনতা বেহাত হয়, ঠিক ২৪-এর পরে একপেশে সরকার গঠিত হওয়ায় বিপ্লবও বেহাত হওয়ার পথে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মিজানুর রহমান ভূইয়া, সভাপতি গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর, বক্তব্য দেন মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, মামুন, সভাপতি যুব অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর, গুলশান থানার আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, গুলশান থানার সদস্য সচিব আমিনুর ইসলাম, বাড্ডা থানার সভাপতি রাসেল ফকির প্রমুখ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি