জুলাই বিপ্লবে শহীদ-আহতদের সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে জামায়াতে ইসলামী : বুলবুল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪
জুলাই বিপ্লবে শহীদ-আহতদের সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে জামায়াতে ইসলামী মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিশেহারা। তখন তারা আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তারা ভেবেছে এতে জামায়াতে ইসলামী আলাদা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামবে। আর জামায়াতের ওই আন্দোলনকে দমনের নামে দেশে গণহত্যার মহোৎসব চালিয়ে নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী আলাদা কোনো কর্মসূচি না দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল তুলতে সহযোগিতা করেছে। কারণ আমাদের কাছে দলের চেয়ে দেশ বড়।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জামায়াতে ইসলামীর গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোন সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে ২০ হাজার মামলায় জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আসামি বানিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। দেশে আওয়ামী লীগ ব্যতীত কেউ মানবতাবিরোধী কাজ করেনি। জামায়াতের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে বিচারিক হত্যাসহ দলের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে ক্রসফায়ার, খুন, গুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, জুলুমকারী মজলুমের ওপর বেশি দিন কর্তৃত্ব করতে পারে না। জুলুমের শিকার হয়ে আমরা আমাদের নেতাদেরকে হারিয়েছি। কিন্তু নেতৃত্ব শূন্য হয়ে দেউলিয়া হয়ে যাইনি। কারণ আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে, আল্লাহর বিধান কায়েমের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করা। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াত-শিবির জীবন ও রক্ত দিয়েছে। আগামী দিনেও জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা সবার আগে প্রথম সারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করব।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার লাভের সুযোগ পাবে, নারী তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা পাবে, সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। রাষ্ট্রের কাছে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠের বিবেচনা থাকবে না, রাষ্ট্রের কাছে সকলেই নাগরিক এবং সকলে সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে। একটি বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে তিনি আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ও গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোন পরিচালক মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারি ও গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোনের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসান হাসানের পরিচালনায় গেন্ডারিয়ার এক কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান।
এ সময় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন গেন্ডারিয়া উত্তর থানা আমির গোলাম আযম, ওয়ারী পশ্চিম থানা আমির মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ‘আল্লাহ নিজে বলেছেন, আমি তোমাদের জান ও মাল কিনে নিলাম। বিনিময়ে তোমাদেরকে জান্নাত দিব। এই ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি দুনিয়াতে আসার আগেই হয়েছে। কিন্তু দুনিয়াতে এসে আমরা সেই চুক্তির কথা ভুলে গেছি। এই ভুলে যাওয়াটা স্মরণ করে দিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে না। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে একামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। যারা সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে দিন শুরু করে তারা ক্ষমতার জন্য মানুষকে হত্যা করতে পারে না, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, লুটপাট করতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী এদেশের সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন কোরআনের বিধানে পরিচালিত করতে চায়। তবেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি