বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এরকম রাজনৈতিক ঐক্যমত তৈরি হয়নি : নুর
- তুহিন আহামেদ, আশুলিয়া (ঢাকা)
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:২৩
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল বিশেষ করে ইউনূস সরকারকে নিয়ে, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং জ্ঞান, তার যে পাণ্ডিত্ব, আমাদের ধারণা ছিল তার সেই জ্ঞান, পাণ্ডিত্ব এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে দ্রুত গতিতে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে দিবেন। কিন্তু চার মাসে সেটা কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু আমরা হতাশ হতে চাই না, আমরা আশাহীন হতে চাই না, আমরা আশা রাখতে চাই। যেহেতু এই সরকারকে সবাই সমর্থন দিয়েছি, আমরা মনে করি যে বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এরকম রাজনৈতিক ঐক্যমত তৈরি হয়নি। যেটা এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশ্নেই তৈরি হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, এবছরের বিজয় দিবসটি অত্যন্ত আনন্দক্ষণ এবং উৎসবের সাথেই পালন করছি। কারণ আমরা দেখেছি যে গত দেড় দশকের যে কর্তৃত্ববাদী শাসন আমাদের ঘারের ওপর চেপে বসেছিল। শহীদ মিনারে কিংবা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেও অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ লাঞ্ছিত হয়েছেন। নানাভাবে নাজেহাল হয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে অন্তর্বর্তী সরকার ছোট-বড় সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করেছে। প্রধান উপদেষ্টা এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আমাদের বিদেশী মেহমান পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে, আমরা সে সময় উপস্থিত ছিলাম।
ভিপি নুর বলেন, এইবারের বিজয় দিবসকে বিশেষ করে মনে করি, যেহেতু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রকে নির্মাণ করা। ২০২৪ এসেও সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলন করতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে গত ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। যার কারণে কিন্তু এখন গোটা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের একটা জোড়ালো দাবি উঠেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, আশা করি তারা জনআকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, চার মাসে আসলে একটা সরকারকে মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট সময় নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের এই ধরণের পরিস্থিতি বোধ হয় গত ৫৩ বছরে ফেস করেনি। যে একটা সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি যে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেম পর্যন্ত পালিয়ে যায়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব সাহেবও পালিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রকে এরকম একটা ভঙ্গুর ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কাজেই সেখান থেকে রাষ্ট্রকে একটা সঠিক জায়গায় তুলতে কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করবে কিংবা থাকবে, তাদের কিন্তু '৭১ মেনে এবং '৭১ কে সম্মান করতে হবে। আমাদের এই অস্তিত্বের জায়গাটা কোনোভাবেই কম্প্রোমাইজ করব না। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এই ৫৪ বছরে এখনো আমাদের দেশে ৭১-এর পরাজিত শক্তির তৎপরতা আছে। বিশেষ করে যেটা আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখেছি যে জাতিকে বিভক্ত করে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিপক্ষের শক্তি নামে নানাভাবে ট্যাগ দেয়া হতো। যদিও আমি মনে করি যে ৫৪ বছরে এখন আর স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে কিছু নাই। যারাই বাংলাদেশে আছে, সবাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।