বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন : আসিফ নজরুল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন।’
রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখা বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর আজকের একটি বক্তব্য নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সম্প্রতি দায়ের করা রিট মামলায় হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই মর্মে ৩ ডিসেম্বর মতামত প্রদান করে। অর্থাৎ উক্ত কমিটি গঠনের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় মতামত প্রদান করে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে (বা এর নামে প্রচারিত একটি স্মারকে) আপাতত এই কমিটি গঠন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের কোন মতামতের উল্লেখ করা হয়নি। এ ধরনের কমিটি গঠন করার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, হাইকোর্ট-এর আদেশ অনুসারেও এটি করার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয় এজন্য সকল সহযোগিতা প্রদান করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন।’
এর আগে রোববার পিলখানায় বিডিআর সদরদফতরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’টি মামলা চলমান থাকায় আপাতত জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন হচ্ছে না বলে আদালতকে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই হত্যাকাণ্ড ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড ঘিরে প্রকৃত সত্য বের করতে ‘জাতীয় স্বাধীন কমিটি’ গঠন চেয়ে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ এ তথ্য জানানোর পর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী এটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
এ বিষয়টি নিয়ে আইন উপদেষ্টা তার ভেরিফাইড ফেসবুকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদফরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটেছিল দেশের ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিডিআরের বিদ্রোহের নামে ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়।
বিদ্রোহের নামে সংঘটিত ওই ঘটনার প্রকৃত কারণ ও চিত্র উদঘাটনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। ওই ঘটনায় হাজারো বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়। শুরু থেকেই ওই বিচারের নিরপেক্ষতা, উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন ছিল। বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে আনা মামলায় নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টেও রায় হয়। এ ঘটনায় আনা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৬০ জনের। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন। বিচারিক আদালতে দেয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয় । ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয় । ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন। উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামিপক্ষেও ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করা হয়েছে।
দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বৃহত্তম এই মামলায় বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আসামি করা হয়েছিল। এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির এই নেতার মৃত্যু হয়। তাকে মামলায় সম্পৃক্ত করা ও এ মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
সূত্র : বাসস এবং অন্যান্য