শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে : গোলাম পরওয়ার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৫
জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের ইসলামি দলগুলোকে নিঃশেষ করে শেখ হাসিনা একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে দলীয় বিচারক ও প্রসিকিউটর দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টন কলেজ মাঠে পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘শেখ হাসিনার গঠিত সেই ট্রাইব্যুনালে দলীয় সাক্ষী দিয়ে সাজানো মামলায় শহীদ মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা সাজানো মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তিনি সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর, সাক্ষীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করছে না, তবে কালক্ষেপণও চায় না। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে না। আবার নির্বাচনে কালক্ষেপণ হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শিগগিরই সংস্কার শেষ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা।’
পল্টন থানার আমির শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চায়। জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নেতারা আওয়ামী লীগের সাথে আপস করেননি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে আপস করেনি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন ও রক্ত দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতে মুসলিমদের ওপর হিন্দু জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্র জুলুম-নির্যাতন করছে। মসজিদ ভেঙ্গে দিচ্ছে। সেই ভারতের কাছ থেকে আমাদের সম্প্রীতি শিখতে হবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব।’
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু করেছে। পরে ২০০৯ সালে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে ফ্যাসিবাদের চর্চা করেছে। গত ১৫ বছর যারাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছে, তাদেরকেই আওয়ামী লীগ নিঃশেষ করার মিশনে লিপ্ত হয়েছে। সেই মিশন থেকে রক্ষা পায়নি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলামী, বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের লোকজন। তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু জনগণ তাদের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ওই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয় আসে। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে তাদের প্রভুদের কাছে ভারতে চলে গেছে।’
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘গণহত্যার দায়ে খুনি হাসিনার গ্রেফতার পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও ভারত তাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব করেনি এবং চায় না। তাদের বন্ধুত্ব শুধুই আওয়ামী লীগের সাথে। ভারত যদি এদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব চায়, তবে খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার করতে দিতে পারে না, বাংলাদেশ নিয়ে হাসিনার ষড়যন্ত্রে সমর্থন ও সহযোগিতা থাকতে পারে না এবং পারবে না।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি