এই মুহূর্তে হঠকারিতা দিকে যাওয়া জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে : মির্জা ফখরুল
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৫৯
এই মুহূর্তে হঠকারিতা দিকে যাওয়া জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে কলকাঠি নাড়ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি হঠকারিতা দিকে যাওয়া, এই মুহূর্তে, এই সময়ে, আমার মনে হয় জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। আমরা যেন এমন কিছু না করি; যে ফ্যাসিস্ট ভারতে পালিয়ে গেছে, সেখান থেকে কলকাঠি নাড়ছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটি নস্যাৎ হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদ স্বাধীনতা নিয়ে আজকে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরে, যখন আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত একটি দেশে বসবাস করছি- ভাবতে পারিনি। গত ১৫ বছর আমরা সব সময় ভয়ে ছিলাম কিছু লেখা জন্য, কখন আবার কারাগারে যেতে হয়। আজ এখনো এ বিষয়ে কথা বলতে হবে, সেটা আশা করিনি। ৫৩ বছর পরে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে কথা বলতে হচ্ছে সংবাদপত্রের ওপর আক্রমণের কারণে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। এটার নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। আমাদের লড়াই তো বাকস্বাধীনতা, মুক্ত মত প্রকাশের জন্য, অধিকার প্রয়োগ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আজকের কিছু মানুষ জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে, কিছু কথা বলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, পুরোপুরি নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগুলো বন্ধ করা দরকার। না হলে যে লক্ষ্য নিয়ে, চেতনা নিয়ে আমাদের মানুষেরা প্রাণ দিয়েছে তা ব্যর্থ হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার যেকোনো সরকার থেকে ভালো। সে যেই হোক, যেই আসুক। গণতন্ত্রের চর্চা হোক, যেটি ৫৩ বছরে হয়নি, চর্চার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে নিবো।’
‘আমরা যেকোনো মূল্যে মানুষের, সংবাদপত্রের, ভোটের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো’- প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘গণমাধ্যম শক্তিশালী না হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। গনতন্ত্র যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে অবশ্যই সংবাদপত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করি। পুরনো ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনতে এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করি।’ বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই। এটা মগের মুল্লুক না। দেশকে সে জায়গায় নিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। সরকার যেন অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেয়। কোনো রাজনৈতিক দলই গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেয়ার পক্ষে না। সবকিছুর বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি না হলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। ফ্যাসিজম আবার ফিরে এলে দেশ অন্ধকারে ফিরে যাবে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে সাংবাদিকতার উপর যে চাপ ও বাধা ছিল, আমাদের প্রত্যাশা এখন আর সেটি থাকবে না। স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্য দরকার। সবসময়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে সাংবাদিকতা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও দেশকে গণতন্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় পাশে থাকবে গণমাধ্যম।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলা সম্ভব। গণমাধ্যমও বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ায় ছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই সমাধান। দুর্বল অন্তবর্তী সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা মিলবে না। সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যেন যোগসূত্র স্থাপিত হয়।’
নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্য ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। দেশের এই সংকটময় সময়ে আমরা আশা করছি রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। দেশের ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের কাছ থেকেও আমরা এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, সহযোগিতা ও সমর্থন আশা করি। দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বার্থে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে তারা সোচ্চার থাকবেন সেটাই প্রত্যাশিত।’
আরো বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।