আল জাজিরার সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দিলেন ড. ইউনূস
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৭, আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৫
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় দেয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের চার বছর নিয়ে কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, ‘আমার বক্তব্য যেটি আল জাজিরায় ছাপা হয়েছে, সেটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। সেটিই বোধ হয় আমার অফিস থেকে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গটি নির্বাচন নিয়ে কথা ছিল না। এটি ছিল পার্লামেন্টের চার বছর নিয়ে আলোচনা। ওখানে নির্বাচনের চার বছর নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
বুধবার (২০ নভেম্বর) বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, এই যে সংস্কার করবেন, সংবিধানের যে সংস্কার করবেন; সেগুলো কী কী হতে পারে? উত্তরে আমি বলেছিলাম বহু হতে পারে; বহু রকমের ইস্যু আছে। যেমন কেউ বলে যে প্রত্যেক সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করুন। দু’দফার মধ্যে সীমা এবং পার্লামেন্ট পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করুন। তখনই চার বছরের প্রশ্নটি এলো। সে সময় আবার প্রশ্ন করা হয় যে তাহলে আপনারা কী চার বছর থাকবেন? কথাটি ছিল পার্লামেন্টের, এখন প্রশ্ন করে ফেলল আপনারা কী চার বছর থাকবেন? ওই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছি, না, না। অনেক কম। এই অনেক কমটাই এসে বলছে চার বছর। চার বছর বলা হলো পার্লামেন্ট নিয়ে। এখন এটি হয়ে গেছে নির্বাচন নিয়ে। অথচ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল না।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, “আল জাজিরা ভুলভাবে উপস্থাপন করেনি। তারা ঠিকই দিয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম সুন্দর রিপোর্ট করেছে। আমাকে তো আল জাজিরা পর্যন্ত যেতে হচ্ছে না। সে পত্রিকাগুলো আল জাজিরা থেকে নিয়ে বলছে। কিন্তু অন্য অনেক কাগজে চার বছর লাগবে উল্লেখ করেছে। আরে চার বছর ওদের তো ধরে-বেঁধে রাখতে পারবেন না। যাদের নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, উপদেষ্টামণ্ডলী, তারাই বলবে, ‘আজই আমাদের ছেড়ে দিন। আমি কী করে চলব? এ বেতনে আমার ছেলের বেতন দিতে পারছি না। যত তাড়াতাড়ি পারেন নির্বাচন দিয়ে দিন। আমরা চলে যাই।’ কাজেই আমাদের উদ্দেশ্য হলো যে তাড়াতাড়ি যাওয়া। আমরা চার বছর বললে তো লোক এখনই বের হয়ে চলে যাবে। একজন-দু’জন না, আমাদের কয়েকজন আছে যারা বলেন, ‘আমাদের ছেড়ে দেন। আর কতদিন আমাদের রাখবেন?”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকার যাত্রা করল। এর মধ্য দিয়ে স্থিতি আনা ও মানুষকে একত্র করা। এয়ারপোর্টে সবার কাছে আবেদন জানালাম যে আমরা এক পরিবার। আমাদের মাঝে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা একে অন্যের শত্রু না। আমরা একযোগে কাজ করব। একসঙ্গে থাকি। এ অভ্যুত্থান আমাদের নতুন যাত্রার সুযোগ দিয়েছে। তো সেটি নিয়েই শুরু। তারপর আস্তে আস্তে কাজে নামা। তার মধ্যে বড় সমস্যা হয়ে গেল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।’
তিনি বলেন, ‘এ অভ্যুত্থানের ধকল সয়ে মানুষ আস্তে আস্তে সুস্থির হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশ পাচ্ছে না। এখনো সব পুলিশ কাজে আসেনি। তারা ভয় পেয়ে গেছে। কাজেই এদিকে পুলিশ নেই, ওদিকে মানুষের অস্থিরতা। কে কোথায় আছে? কী করছে? হঠাৎ করেই এ অভ্যুত্থান ঘটল। একটু সুস্থির হতে সময় লাগছে। আমরাও বোঝার চেষ্টা করছি কোথা থেকে শুরু করব। সব তো লণ্ডভণ্ড অবস্থা। অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড, ব্যাংকিং সিস্টেম লণ্ডভণ্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য লণ্ডভণ্ড। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। এগুলো নিয়ে প্রতিদিনই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।’
কিছু কিছু জায়গায় সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের অভাব তো থাকবেই। আর আমরা তো এ কাজের মানুষ না। আমাদের তারাই পছন্দ করে নিয়ে আসছে। কাজেই আমরা যতদূর পারি, ততদূর করি। ভুল-ত্রুটি হবে স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটির মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। যতটুকু আমাদের সাধ্যে কুলায় সেভাবেই চেষ্টা করছি। আর যেগুলো অসম্পূর্ণতা আছে, আমরা চেষ্টা করি কিভাবে সম্পূর্ণ করব।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা