পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা কামনা জামায়াত আমিরের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৩
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা কামনা করে যুক্তরাজ্যে সফররত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। পাচার হওয়া টাকা ফেরত পেলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি-তে কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৬ বছর দেশের মানুষের সাথে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। তারা মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল। তারা চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও অন্যায় বিচারের একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দফতরে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায় এবং একইসাথে বিডিআর বাহিনীকেও শেষ করে। এ দু’ খুনের মিশনের পর তারা আঘাত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের ওপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।’
ডা. শফিক যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিতদের আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব দেয়ায় আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা প্রকাশ করছি আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না।’
তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাকে সংবর্ধনা নিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আপনারা প্রবাসে থেকে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করেছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সাথে বসবাস করবে। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে। আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমিরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সকল নেতার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।’
২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দু’ হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি কর। আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার এমন ত্যাগের বিনিময়েই দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এখন আমাদেরকে আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটির পরিচিত মুখ মুফতি সদরুদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও উলামা মাশায়েখ ইউকে-এর সভাপতি শায়েখ মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, প্রফেসর ডক্টর হাসনাত হোসাইন এমবিই, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মানবাধিকার সংগঠন মুসলিম ভয়েস-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী মির্জা আসহাব বেগ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদাউস জলিল, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চ্যানেল আই ইউরোপের সাবেক এমডি রেজা আহমেদ চৌধুরী শুয়েব, লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, দৈনিক আমার দেশের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অলি উল্লাহ নোমান, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাদেকুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, নির্যাতিত সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।
সাবেক ছাত্র নেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপ এর পরিচালনায় পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত উক্ত নাগরিক সংবর্ধনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম শাহীন। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক কেবিনেট মেকাউন্সিলর কবির হোসাইন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আল কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মাওলানা হাফিজ কাজি হামিদুল হক। বিভিন্ন সময়ে শিল্পী নওশাদ মাহফুজ ও কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে শিল্পীদের দু’টি পৃথক দল ইসলামিক নাশিদ পরিবেশন করেন।
এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে জনাব মাহফুজ নাহিদের নেতৃত্বে ফুলের তোড়া দিয়ে ডা. শফিকুর রহমানকে বরণ করে নেয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি