১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সীমাবদ্ধতা সত্বেও একটি মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাব : ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস - ছবি : বাসস

দায়িত্ব ছাড়ার আগে দেশের অর্থনীতি মজবুত করে দিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ চলার পথ সহজ এবং নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবে তার সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস একথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একশ দিন আগে আর্থিক বিষয়ে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থায় থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশ দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। আর এটি হয়েছে সম্পূ্র্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘বলা বাহুল্য, এখনো আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে, তা আসা শুরু হয়নি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো শুধু যে আমাদের জন্য বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তা-ই নয়, তাদের এই সাহায্য যে দ্রুততম সময়ে (দেশে) আসা শুরু করবে, এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এগুলো আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’

অর্থনীতি মজবুত হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকেই আমরা বিনিয়োগকারীদের সাথে আলোচনা শুরু করে দিয়েছি।’

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিশ্ব রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত ও প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এ কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না।’

দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয় পাত্র হওয়ার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন; এ ব্যাপারে অনড় থাকুন।’

‘এমন কিছু করবেন না যা তাদের উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদের সব দিক থেকে নিরাশ করুন। এটি নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোনো বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই।’

দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রত্যয় জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি- সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্বেও আমরা আপনাদের একটি মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাব; ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য এবং নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাব।’

‘বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক, সবকিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি, তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না পারে- তার জন্য প্রতিটি মুহুর্তে প্রস্তুত থাকুন।’

এ সময় বাংলাদেশর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ইউএনডিপির মতো আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন বলে জানান ড. ইউনূস। এমনকি তাদের সাথে ইতোমধ্যে তিনি দীর্ঘ বৈঠকও করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

এজন্য বিশ্ব নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে তারা প্রায় সবাই সহযেগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যখন সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেই, সে সময় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সাথে আমার বৈঠক করার সুযোগ হয়। তারা আমাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এমনকি, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়েছে।’

‘দেশে ফিরে আসার পর ঢাকায় অবস্থান করা সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা স্বঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমার সাথে দেখা করে তাদের সরকারপ্রধানদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন। তারা আমাদের জন্য সহায়তার নতুন ছক তৈরির কাজ শুরু করেছেন।’

ভাষণের শেষে দেশের জনসাধারণের প্রতি আবার সতর্কতার বাণী উচ্চারণ করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে ব্যর্থ, অকার্যকর করার জন্য ব্যাপক পরিসরে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে। তাদের একটি বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।’

‘পতিত সরকারের নেতা যারা এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে, সেই অর্থে বলীয়ান হয়ে তারা দেশে ফেরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু; জাতি হিসেবে আমাদের অবসান। তাই সাবধান থাকুন!’

অপশক্তির সব হীন প্রচেষ্টাকে ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেভাবে তাদের বন্দুকের গুলিকে, আয়না ঘরকে, প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে নস্যাৎ করেছিলেন, সেভাবেই সব (ষড়যন্ত্র) নস্যাৎ করে দিন। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement