১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

‘শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে প্রতিটি খুনের বিচার করতে হবে’

- ছবি : সংগৃহীত

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে প্রতিটি খুনের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন।

তিনি বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে দেশকে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, আইন-আদালত, মানবাধিকারসহ দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তাকে সন্তানহারা শতশত মা-বা হাহাকার, বাবাহারা হাজারো শিশুর আর্তনাদ, স্বামীহারা স্ত্রীর প্রতি ফোটা চোখের পানির হিসাব দিতে হবে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) যশোরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।

মোবারক হোসাইন বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা, আগ্নেয়াস্ত্র, লোহার রড, রামদা, ছোরা, লাঠিসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সশস্ত্র হামলা চালায় এবং ঢাকাসহ সারাদেশে ১৪ জন নেতা-কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আজও সেই খুনিদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে খুনি শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কাজেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি খুনের বিচার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পরে দেশের মানুষের মধ্যে শোষণহীন শান্তি-স্বস্তির সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে একদল সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিত প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণবিপ্লব ব্যর্থ ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সকল অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে নস্যাৎ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনে আহত-নিহত ও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে জাতি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আগামীতে আমরা যদি একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখি তাহলে আমাদেরকে মদিনাতুল মনোয়ারার ওই সময়ের মেধা, যোগ্যতা এবং পরিশ্রম আমাদের সামনে আনতে হবে। তাহলেই একটি সুখী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ কায়েম ব্যতীত দুনিয়ায় প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। রুকনদের আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে। নিজেকে পরিবার ও সমাজের মাঝে উত্তম মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে। মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দিতে হবে। প্রতিনিয়ত কোরআন-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য হক আদায় করে পড়তে হবে। রুকনদের দানের হাতকে প্রসারিত করতে হবে। এছাড়া সকল মানুষের কল্যাণে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নসহ সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করতে হবে। কল্যাণ রাষ্ট গঠনে ভূমিকা পালন করতে হবে। বেশি বেশি সামাজিক কাজের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। রুকনদের আত্মগঠনে সচেষ্ট হতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রুকনদের সংগঠন সম্প্রসারণ-মজবুতি অর্জন, ইউনিট ও কর্মী বৃদ্ধিসহ যশোরে জামায়াতে ইসলামীকে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত করতে হবে।’

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও যশোর শহর সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আজীজুর রহমান, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল টিম সদস্য ড. আলমগীর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নড়াইল জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, মাগুরা জেলা আমির অধ্যাপক এম এ বাকের, যশোর জেলা পশ্চিম আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর জেলা পূর্ব ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আজিজ, যশোর শহর সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর, মাওলানা শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীজুড়ে অশান্তির মূলকারণ সততা ও পরকালের জবাবদিহিতার অভাব। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে যে অবক্ষয় অনাচার, লুটপাট ও দুর্নীতিতে সয়লাব হওয়ার প্রধানতম কারণ অসৎ নেতৃত্ব। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও পরকালের জবাবদিহিতা সম্পন্ন নেতৃত্ব উপহার দিয়ে সেই শূন্যতাকে পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ।
বক্তারা আরো বলেন, আজকে জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যাতাকলে মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত। জাময়াতে ইসলামীর প্রত্যেক কর্মীদেরকে নবী-রাসূল সা: ও সাহাবীদের ত্যাগ-কোরবানি স্মরণ করে সামনে চলতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস হলো জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে দ্বীন কায়েমের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। ইতিহাস স্বাক্ষী যতদিন দুনিয়ার বুকে ইসলামের বিধান কায়েম ছিল ততদিন প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্টিত ছিল। আজকের বাস্তবতায় ভেদাভেদের দেয়াল ভেঙে সবার জন্য কল্যাণকর একটিসমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব একমাত্র ইসলামের সর্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি অনুপম সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা দেশবাসী সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বানন জানাচ্ছি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement