দেশের মাটিতেই আশা জাগাচ্ছে ভিয়েতনামি নারিকেল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ মে ২০২২, ১৪:০৩
নারিকেল গাছের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল লম্বা একটি গাছ। এ গাছের একদম উপরের দিকে থাকে ফল। কিন্তু ধরুন কেউ মাটিতে দাঁড়িয়েই নারিকেল পাড়ছে? নারিকেলগুলো মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে ঝুলছে। না, কোনো কাল্পনিক কথা নয়, সত্যিই এমন গাছ রয়েছে আর তা বাংলাদেশেই।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার গোপালপুরের শোভা পাচ্ছে এ নারিকেল। যা ভিয়েতনামি নারিকেল হিসেবে পরিচিত। এই গাছ প্রচলিত নারিকেল গাছের তুলনায় উচ্চতায় অনেক খাটো, ফলনও বেশি।
ঘোড়াঘাট উপজেলার গোপালপুরের কাজী মাহবুবুর রহমান মোহাম্মদ আবু সাঈদ আহমেদ চৌধুরী ২০১৬ সালে তার পুকুর পারে পরিত্যক্ত জমিতে ৫০টা ভিয়েতনামের চারা লাগান। এরপর ২০১৯ সালে প্রত্যেকটা গাছে ফুল আসা শুরু হয়। এর ৬ থেকে ৭ মাস পর ডাব এবং নারিকেল পেয়ে যান তিনি। বর্তমানে তিনি দুই একর জমিতে এ জাতের নারিকেলের চাষ করছেন।
একই সাথে তিনি যেমন ডাব এবং নারিকেলের ফলন করছেন তেমনিভাবে তিনি নতুন চারা তৈরির চেষ্টা করছেন। ফলে তার লাভ হচ্ছে দুইভাবে। ফল ও চারা বিক্রি করে।
আবু সাঈদ বলেন, ‘এই গাছ হাইব্রিড জাতের হওয়ার কারণে যত্ন একটু বেশি করতে হয়। বেলে-দোঁআশ মাটিতে ভালো হয়। আর আমার মনে হয় এই নারিকেল গাছ অনেক পানি খায়। আমি গোবরের কমপোষ্ট সার দিচ্ছি। তবে আমার মনে হচ্ছে আরো ভালো যত্ন করলে গাছ বাঁচানো যাবে।’
একটা গাছ বিক্রি করে তিনি গাছ প্রতি ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা পান। আর ডাব ও নারিকেল প্রতিটি বিক্রি করেন ৩০ টাকা করে।
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। তবে আমাদের দেশে বর্তমানে যে প্রচলিত নারিকেলগুলো রয়েছে তা থেকে ফলন পেতে স্বাভাবিকভাবে ৭ থেকে ৮ বছর সময় লাগে। তাই নারিকেলের ফলন যাতে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় তাই নতুন এই সম্পূর্ণ ডোয়ার্ফ (খাটো) জাতটির আবাদের ব্যাপারে জোর দেয়া হচ্ছে।
উপযুক্ত পরিচর্যা করলে একটি গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ২৫০টি নারিকেল পাওয়া যায়। উন্নত এ জাতের সম্প্রসারণ করা গেলে আমাদের দেশের নারিকেলের উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ভিয়েতনাম থেকে আগত খাটো নারিকেল গাছের দুটি জাত রয়েছে–
১. সিয়াম গ্রিন কোকনাট : এটি ডাব হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এ জাতের ডাবের রং কিছুটা সবুজ, আকার কিছুটা ছোট, প্রতিটির ওজন ১.২ থেকে ১.৫ কেজি। এ জাতের ডাবে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার পানি পাওয়া যায়। বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০টি।
২. সিয়াম ব্লু কোকোনাট : এটিও অতি জনপ্রিয় জাত। এটা উদ্ভাবন করা হয় ২০০৫ সালে। ভিয়েতনামে এ চারা কৃষকের খুবই পছন্দ। ফলের রং হলুদ, প্রতিটির ওজন ১.২ থেকে ১.৫ কেজি, ডাবে পানির পরিমাণ ২৫০-৩০০ মিলিলিটার। ডাবের পানি খুব মিষ্টি এবং শেলফ লাইফ বেশি হওয়ায় এ জাতের ডাব বিদেশে রফতানি করা যায়। বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০টি।
চাষ পদ্ধতি
পিট তৈরি : আদর্শ পিটের মাপ হবে ৩ ফুট x ৩ ফুট x ৩ ফুট। গর্ত তৈরির পর প্রতি গর্তে ১৫ থেকে ২০ কেজি পচা গোবর অথবা আবর্জনা পচা সার দিতে হবে।
মাটিতে অবস্থানরত পোকার আক্রমণ থেকে চারা রক্ষার জন্য প্রতি গর্তে ৫০ গ্রাম বাসুডিন প্রয়োগ করতে হবে। সব কিছু মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
ভরাটের পর পানি দিয়ে গর্তটাকে ভিজিয়ে দিতে হবে যাতে সব সার ও অন্যান্য উপাদান মাটির সাথে মিশে যায় যা চারা গাছের শিকড়ের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
চারা রোপণ : গর্তের মাঝখানে নারিকেল চারা এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে নারিকেলের খোসা সংলগ্ন চারার গোড়ার অংশ মাটির ওপরে থাকে।
চারা রোপণের সময় মাটি নিচের দিকে ভালোভাবে চাপ দিতে হবে যাতে চারাটি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
বাড রট-কুঁড়ি পচা : রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে ৪ থেকে ৫ গ্রাম প্রপিনেব ও ম্যানকোজেব গ্রুপের রোগনাশক সিকিউর মিশিয়ে কুঁড়ির গোড়ায় স্প্রে করতে হবে ২১ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার।
ফল পচা রোগ : প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব গ্রুপের রোগনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত ফলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
পাতার ব্লাইট : পরিমিত সার প্রয়োগ করলেও যথাসময়ে সেচ এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগের আক্রমণ কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে প্রোপিকেনাজল গ্রুপের রোগনাশক ১৫ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
গণ্ডার পোকা : আক্রান্ত গাছের ছিদ্র পথে লোহার শিক ঢুকিয়ে সহজেই পোকা বের করা যায় বা মারা যায়। ছিদ্র পথে সিরিঞ্জ দিয়ে অরগানো ফসফরাস গ্রুপের কীটনাশক প্রবেশ করালে পোকা মারা যাবে।
নারকেলের মাইট : গাছ পরিষ্কার করে প্রোপারজাইট গ্রুপের ভার্টিমেক-ওমাইট ৪.৫ মিলি থেকে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে এ জাতের নারিকেল হাইব্রিড হওয়ায় এর বীজ দ্বারা চারা উৎপাদন করা যাবে না।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা
চারা রোপণের পর প্রতি ৩ মাস পর পর নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
চারার গোড়া থেকে ৩০ সেমি দূরত্বে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ২০ সেন্টিমিটার গভীর নালায় সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার চারার গোড়া থেকে আগের বারের থেকে ৫-৭ সেন্টিমিটার আরো দূরে সার দিতে হবে। সার দেয়ার পর ১৫-২০ লিটার পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভেজাতে হবে। শুকনো মৌসুমে খড় বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং করে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম বলেন, ‘ভিয়েতনামের নারিকেল আমরা সারা দেশেই চাষ করতে চাই। আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। আমাদের হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা হচ্ছে। এবং কৃষকদের চাহিদামত এটা সরবরাহ করা হচ্ছে।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা