২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
 শোভা বাড়াতে আসছে বনমানুষ

শিউলির সাথে জুটি বেঁধেছে রুস্তম

শিউলির সাথে জুটি বেঁধেছে রুস্তম - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার পশু কিনেছে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে ভিন্ন প্রজাতির চারটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এর দু’টি পুরুষ, দু’টি নারী। এগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ সখ্য। মানিয়েছেও বেশ এই জুটিকে। এ ছাড়া পশু বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে আরো কিছু নতুন প্রাণী আনার জন্য ভারতের দিল্লি ও দুবাই চিড়িয়াখানার সাথে আলোচনা চলছে। জাতীয় চিড়িয়াখানার শোভা বাড়াতে দু’টি বনমানুষ, গন্ডার ও শিম্পাঞ্জি আনারও চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। 

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে চারটি রয়েল টাইগার, দু’টি চিতাবাঘ ও দু’টি ইম্পালা। জুলাই মাসেই দুই দফায় (১০ ও ৩১ জুলাই) এ পশুগুলো চিড়িয়াখানায় এসে পৌঁছেছে। নেদারল্যান্ড থেকে ৩৬ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে তিনটি লাল ক্যাঙ্গারু। এ তিনটি প্রাণীও শিগগির এসে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা: মো: নুরুল ইসলাম। জাতীয় চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চারটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেনা হয়েছে। প্রতিটির দাম ২০ লাখ টাকা। দু’টি চিতাবাঘের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা করে। আর দু’টি ইম্পালার প্রতিটির দাম তিন লাখ টাকা করে। অন্য দিকে নেদারল্যান্ড থেকে তিনটি লাল ক্যাঙ্গারুর প্রতিটির দাম ১২ লাখ টাকা করে। বিরল প্রজাতির এই লাল ক্যাঙ্গারু চিড়িয়াখানার শোভাবর্ধনের জন্য বেশ কাজে আসবে বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের ধারণা।


জাতীয় চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর নয়া দিগন্তকে জানান, বিদেশ থেকে আনা চারটি রয়েল টাইগারের মধ্যে পরিচিতির জন্য পুরুষ দু’টির নাম দেয়া হয়েছে রুস্তম আর টগর। আর নারী দু’টির নাম শিউলি ও বেলি। চিতাবাঘ দু’টির নাম দেয়া হয়েছে পলাশ ও শিমুল। একটি পুরুষ অন্যটি নারী- এভাবে আলাদা আলাদা খাঁচায় তাদের রাখা হয়েছে জুুটি বা সঙ্গী হিসেবে।

চিড়িয়াখানার মাংসাশী পশু শাখার এক কর্মকর্তা জানান, রুস্তম আর শিউলিকে রাখা হয়েছে টাইগার মটে। টগর আর বেলিকে রাখা হয়েছে সি/১১ নং খাঁচায়। চিতাবাঘ দু’টি অর্থাৎ পলাশ আর শিমুলকে রাখা হয়েছে সি/৯ নং খাঁচায়। ইম্পালা দু’টিকে রাখা হয়েছে বৃহৎ প্রাণী শাখায়। 

তথ্য কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়ালিউর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, দর্শনার্থীদের আগ্রহের কথা চিন্তা করেই নতুন কিছু প্রাণী চিড়িয়াখানায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে লাল ক্যাঙ্গারু এবং ইম্পালা শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা আনন্দের খোরাক হবে। কেননা লাল ক্যাঙ্গারু এই প্রথমবারের মতো দেশে আসছে। চিড়িয়াখানায় এই প্রাণীটি যুক্ত হলে আশা করা যায় এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও অনেক বাড়বে। 

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা: এস এম নজরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, ভারতের দিল্লি চিড়িয়াখানার একটি প্রতিনিধিদল কিছু দিন আগে ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে গেছেন। তারা আমাদের সাথে কিছু প্রাণী বিনিময় করতে আগ্রহী। বিশেষ করে দিল্লি চিড়িয়াখানা জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে দু’টি জিরাফ নিয়ে আমাদেরকে দুটি সাদা টাইগার দেয়ার প্রস্তাব করেছে। আমরাও প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছি। কেননা আমাদের তো জিরাফ আছে। এখন যদি আমরা দিল্লি চিড়িয়াখানা থেকে দু’টি সাদা বাঘ আনতে পারি তা হলে আমাদের দেশের দর্শনার্থীরা নতুন এই প্রাণীর সাথে পরিচিত হতে পারবে। আমরাও লাভবান হবো। তবে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। 
চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বৃহৎ প্রাণী বা তৃণভোজী শাখায় রয়েছে ১৮ প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে আছে হাতি, উট, গণ্ডার, জলহস্তি, জিরাফ, জেব্রা, চিত্রাহরিণ, মায়াহরিণ, ঘোড়া, ওয়াল্ডবিস্ট, কমনইল্যান্ড, গ্রেটারকুন্ডু, গাবা, ওয়াটারব্যাক, গরাল, ইম্পালা, ক্যাঙ্গারু ইত্যাদি। 
মাংসাশী শাখায় রয়েছে ১১ প্রজাতির প্রাণী। এগুলোর মধ্যে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ, এশিয়াটিক সিংহ, এশিয়াটিক কালো ভল্লুক, ডোরা কাটা হায়েনা, চিত্রা হায়েনা, শিয়াল, মেছো বিড়াল, বনবিড়াল ইত্যাদি। 

ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ শাখায় আছে ২৫ প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে ব্রেসাস বানর, ভারভেট বানর, কুলুবানর, অলিভ বেবুন, হামাদ্রিয়াস বেবুন, সাদা হনুমান, হনুমান লেঙ্গুর, উল্লুক, সজারু, কুমির, ঘড়িয়াল, অজগর, গোখরা সাপ, দারাস সাপ ইত্যাদি।

পাখি শাখায় রয়েছে ৫৮ প্রজাতির পাখি। এগুলোর মধ্যে উট পাখি, ইমু, কেশোয়ারী, সারস, গ্রেটার ফ্লোমিংগো, হাড়গিলা, মদনটাক, কালো গলাবক, কালেম, পানকৌড়ি, বক, পেলিকেন, ময়ুর, ঘুঘু, গিরিবাজ, সবুজ টিয়া, চন্দনা, হিরামন, কাকাতুয়া, শকুন, তিলাবাজ, শঙ্খচিল, ভুবনচিল, কুড়াবাজ, ময়না, বাজারিগার, ককাটিল, লাভবার্ড, ক্যাকাউ, রোডরলি, কবুতর, ওয়াক ইত্যাদি।

প্রাণী জাদুঘর শাখায় অর্থাৎ অ্যাকুরিয়াম ফিশের মধ্যে রয়েছে ২৬ প্রজাতির প্রাণী। এগুলোর মধ্যে আছে গাপ্পি, টাইগার শার্ক, এলবিনো শার্ক, রেইনবো শার্ক, সিলভার শার্ক, সিলভার ডলার, কৈ কার্প, টাইগার কৈ কার্প, সিলকি কৈ কার্প, টাইগার বার্ব, সাকিং ক্যাট ফিশ, সাদা সাকিং, ক্যাট ফিশ, গোল্ড ফিশ, এনজেল ফিশ, কমেট ফিশ, ব্ল্যাক মুর, ওরেন্ডা, কিসিং গৌরামি, টেলিচো, অস্কার, পিরানহা, ব্লো গৌরামী ইত্যাদি।


আরো সংবাদ



premium cement