২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পদ্মায় 'ভারতীয়' কুমির : বিপাকে জেলেরা

পাবনায় পদ্মা নদীর একটি শাখায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কুমিরটি - ছবি : সংগৃহীত

পাবনায় পদ্মা নদীর একটি শাখায় একটি মিঠা পানির কুমির পাওয়া গেছে। তবে কুমিরটিকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুমিরটি ভারত থেকে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। কারণ প্রায় ৬০ বছর আগে এ ধরণের কুমির বাংলাদেশের নদী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

পাবনা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাওয়ার পরে চরের মাঝে তৈরি হওয়া একটি হ্রদের মতো স্থানে আটকে রয়েছে কুমিরটি।

স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদ হুমায়ুন বিবিসি নিউজ বাংলাকে জানান, প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে স্থানীয় একজন বাসিন্দা মাছ ধরতে গিয়ে প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। এরপর থেকেই ভয়ে আর কেউ ওই খালে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না।

সংবাদদাতারা বলছেন, চর কোমরপুর নামের ওই জায়গাটি পদ্মা নদীর একটি অংশ। কিছুদিন আগে বর্ষার সময়েও সেখানে অনেক পানি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পানি শুকিয়ে চর জেগে ওঠার পর দুইপাশে চর পড়ে মাঝখানে একটি গভীর হ্রদের মতো তৈরি হয়েছে। সেখানেই রয়েছে এই কুমিরটি।

এই এলাকার একজন বাসিন্দা জামাল হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ''কয়েক দিন আগে পদ্মা নদীর চরে বরশি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ কুমিরটিকে মাথা তুলতে দেখি। এরপর আমি এসে সবাইকে খবর দেই।''

তিনি বলছেন, এরপর থেকে ভয়ে সেখানে কেউ মাছ ধরতে যায় না বা নদীর পাড়ে গরু ছাগল চরাতেও যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ৩৫/৪০ বছরের মধ্যে এই এলাকায় প্রথম কুমির দেখা গেলো।

কুমিরটির খবর পেয়ে বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোঃ জাহিদুল কবির বিবিসি নিউজ বাংলাকে বলছেন, ''কুমিরটি যেখানে আছে, সেটি তার জন্য নিরাপদ, কারণ ওখানে গভীর পানি আছে আর মাছও রয়েছে। ওটা ঘনবসতি এলাকা না। যদি এলাকার লোকজন সহায়তা করে, তাহলে এটি ওখানেই থাকতে পারে। এটাকে উদ্ধার করে খাঁচায় বন্দী করার প্রয়োজন পড়বে না।''

''তবে তারা সহায়তা না করে বা তারা যদি রাখতে না চায়, তাহলে আমরা নিয়ে আসবো। তবে কুমিরটির জন্য ওখানে থাকাই ভালো।'' বলছেন মি. কবির।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি মিঠা পানির কুমির। বর্ষার সময় পদ্মা নদীতে ভেসে ভারত থেকে এটি এসে থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

একসময় বাংলাদেশের নদীতে ঘড়িয়াল এবং কুমির নামের দুটি প্রজাতি দেখা যেতো।

১৯৫৯ সাল থেকে বাংলাদেশের নদীতে মিঠা পানির কুমির বিলুপ্ত বলে মনে করা হয়। তবে ২০১৫ সালে মাগুরায় একটি মিঠাপানির কুমির পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামবাসীদের ধরা সেই কুমিরটিকে সুন্দরবনের করমজল এলাকায় কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে রাখা হয়।

প্রকৃতিতে এরপর এই দ্বিতীয় কুমিরটির সন্ধান মিলল।

জাহিদুল কবির বলেন, কাছাকাছি গেলে বা বিরক্ত করলে এগুলো আক্রমণ করতে পারে, না হলে আক্রমণের ঝুঁকি নেই।

''একসময় বাংলাদেশের বহু খালে বিলে নদীতে মিঠা পানির কুমির হর-হামেশাই চোখে পড়তো। তবে মাছ শিকার বেড়ে যাওয়ায় জালে বেঁধে এগুলো মারা পড়তে থাকে। কালে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।''

এর মধ্যে অবশ্য পদ্মা এবং যমুনা নদীতে ঘড়িয়ালের চারটি বাচ্চা পেয়েছে বন বিভাগ।

তবে ব্যক্তিগতভাবে বা বাণিজ্যিকভাবে যেখানে কুমির চাষ করা হয়, সেখানে মিঠাপানির কুমির থাকতে পারে। এছাড়া সুন্দরবনে লোনা পানির কুমির রয়েছে।

প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে কাজ করে, এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইইউসিএনের সাবেক বাংলাদেশ পরিচালক প্রধান ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বিবিসি নিউজ বাংলাকে বলছেন, এটা বাংলাদেশে পাওয়া গেলেও, আমাদের কুমির হয়তো বলা যাবে না। কারণ ভারতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনেক স্থানে কুমির চাষ করা হয়। হয়তো সেখান থেকে কুমির ভেসে আসতে পারে।''

যদিও এই কুমিরটির মাধ্যমে কারো ওপর হামলার খবর জানা যায়নি। তবে আহমেদ বলছেন, কুমিরের কাছাকাছি গেলে সব সময়েই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

তার পরামর্শ, এই লেগুনে কুমিরটিকে ফেলে না রেখে বরং সেটিকে চিড়িয়াখানা বা কোনো পুকুরে রাখলে সেটির জন্য বেশি নিরাপদ হতে পারে। তাতে হয়তো সেখানকার মানুষের ভীতিটি কমে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement