২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিপিএএ-এর উদ্যোগে গোলা টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত

সিপিএএ-এর উদ্যোগে গোলা টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত - সংগৃহীত

সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির (সিপিএএ) উদ্যোগে ‘আগামীর বাংলাদেশ: জনগণের ক্ষমতায়ন ও কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলা টেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গোল টেবিল আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শাফিউল ইসলাম।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিএএ-এর প্রেসিডেন্ট ড. শরীফুল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ইকতেদার আহমেদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফয়েজ আহমেদ, গাম্বিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ওপেন ইউনিভারসিটির প্রফেসর আফরোজা বুলবুল, ব্র্যাক ইনস্ট্রিটিউট অব গভরনেন্স ড. মির্জা হাসান, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শাহ বুলবুল ইসলাম, ইউকে ওপেন ইউনিভার্সিটির ড. নাবিলা ইদ্রিস, সাংবাদিক আসজাদুল কিবরিয়া, ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মীর মানজুর মাহমুদ, প্রফেসর মো: আতিয়ার রহমান, গবেষক আলী আহসান জুনায়েদসহ দেশী-বিদেশী বরণ্য শিক্ষাবিদ, অ্যাকাডেমিক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, বিচারক (অব.), আইনবিদ, পেশাজীবিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জুনায়েদ মাসরুর খান।

সভায় কিছু জরুরি করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়;
আমরা আবারো বলছি রূপান্তর হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রপঞ্চ। তাই দীর্ঘ মেয়াদি রূপান্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার হাতে ন্যস্ত করা জরুরি। তবে যেহেতু বাংলাদেশ সমাজ বিগত ৫০ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেছে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অনেক সংকট ও ভঙ্গুরতা ঘনীভ‚ত হয়েছে, তাই আপাততঃ একটি গণতান্ত্রিক পাটাতন তৈরির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডার উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বড় উচ্চাকাংখা এক-এগারোর মতো পরিণতির দিকে নিতে পারে। যদি একটি শক্ত পাটাতন তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে গণতান্ত্রিক রুপান্তর সহজ হবে। পাটাতন তৈরির প্রক্রিয়াকেও জৈবিক এবং জনগণের নেতৃত্বে করতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা কিছু গুরত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি। এগুলো সামান্য ইঙ্গিত মাত্র। আরো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হতে পারে। আশা করি বিজ্ঞ প্যানেলিস্টগণ আরো বিশ্লেষণ করবেন এবং পরামর্শ দিবেন। তবে এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে সংস্কার এমনভাবে করতে হবে যাতে রাজনৈতিক বৈধতা থাকে। সেজন্য ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দলকে এ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। প্রয়োজন একটি চুক্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত না হয়।

(১) সংবিধান সংস্কার
নানা মহল হতে এ বিষয়ে কথা উঠছে। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট কর্মপরিধিসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আমরা কোন সুনিদিষ্ট মতকে সমর্থন বা অসমর্থন করছি না। তবে মনে করি বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সংবিধানের গণতান্ত্রয়ানের সাথে জনগণের ক্ষমতায়ন জরুরি। ‘নাগরিক অধিকার’ ক্ষুণœ করে, এমন কিছু রহিত করা জরুরি। তাই, সংবিধান সংস্কার হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার। আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন সংবিধান ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

(২) সকল প্রতিষ্ঠান যাতে ক্রিয়াশীল থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা
সকল পর্যায়ে, ভালো সময়ে বা মন্দ সময়ে, যাতে সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করতে পারে এবং রাজনৈতিকভাকে প্রভাবিত না হয়, সেজন্য কিছু রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে। উন্নত-উন্নয়নশীল দেশসমূহের উত্তম চর্চ্চাসমূহ বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আমরা যদি সিভিল সার্ভিসকে বাঁচাতে পারি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। ভারতে শুধু সিভিল সার্ভিসের কারণে এখনো মোটা দাগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়। অস্ট্রেলিয়ায় পাবলিক সার্ভিসকে রক্ষার জন্য ’মেরিট প্রটেকশন’ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরাও সব প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু ব্যবস্থা রাখতে পারি। রাষ্ট্র যদি কিছু ক্ষেত্রে আর্বিটারি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে এমনিতে শাসন ব্যবস্থায় উন্নতি হবে। কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছাড়া কার্যকর রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। তাই সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও নৈর্ব্যক্তিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(৩) যে কোন মূল্যে বিচার ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে
সংস্কারের একটি মূল লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন যে বিচার ব্যবস্থাকে, উচ্চ আদালত বা জেলা আদালত, যে কোন মূল্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হতে রক্ষা করা। এটি সাংবিধানিক এবং প্রায়োগিক-উভয়ভাবে করতে হবে। উচ্চ আদালতে নিয়োগে মেরিটোক্রেসি এবং নির্দিষ্ট কিছু স্পষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য শর্ত দিতে হবে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সাথে বিদেশী বিনিয়োগ, রাজনৈতিক অধিকার, সুশাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি সবকিছু জড়িত।

(৪) কার্যকর সরকারের জন্য বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সংস্কার করা
বর্তমানে সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান সময়ের বিবর্তনে কার্যকারিতা হারিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত একটি সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে রাষ্ট্রের সাইজ সঠিক অবস্থায় আনা যায়। বর্তমানে বাজেটের সিংহভাগ বেতন-ভাতায় যায়। এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে রাষ্ট্রের সঠিক সাইজ নির্ধারণ করতে হবে। ফলে সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহের বর্তমান অবস্থা ও প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এটি একটি অন্যতম আশু করণীয়।

(৫) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যাপক সংস্কার দরকার
কার্যকর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য যথাযথ ডায়াগনস্টিক করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একদম নির্মোহভাবে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেকে গরীব হচ্ছে। এশিয়ার যেসব দেশ এসব ক্ষেত্রে সফল হয়েছে সেসব উদাহরণ বিবেচনায় নিতে হবে।

(৬) যে কোন চুক্তি (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক‚টনৈতিক) পাবলিক করা এবং সংসদীয় আলোচনায় আনা
দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিসমূহকে প্রকাশ করতে হবে এবং সংসদীয় বিতর্কে নিতে হবে।

(৭) দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তন চিহ্ন বুঝা
আপাততঃ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংস্কারের সাথে সম্পর্কিত মনে না হলেও বৃহত্তর অর্থে এবং দীর্ঘ মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তন রেখা বুঝা এবং উপলব্ধি করা জরুরি। এ পরিবর্তনের আলোকে বাংলাদেশকে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement