১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
আরআরএসএফ’র সেমিনারে বক্তারা

প্রতিবিপ্লব রুখতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের ব্যবহারের আহ্বান

আরআরএসএফের সেমিনারে বক্তারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে তা যাতে কোনো প্রতিবিপ্লবের কারণে হাতছাড়া না হয় তার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম (আরআরএসএফ) আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ আহ্বান জানানো হয়।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো: নাসিমুল গনি, লে. কর্নেল (অব.) মোশাররফ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর ড. শহীদুজ্জামান, ডা. জাহেদ উর রহমান। সভা পরিচালনা করেন লে. কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান।

বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদ ও ছাত্র জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু করা হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে ছাত্র-জনতা যে আন্দোলনের সূচনা করেন তাতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা ও চূড়ান্ত বিজয়ে বর্তমান সেনা সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে রক্ষায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সারাদেশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রাখে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা প্রতিবাদ ও জনসংযোগ শুরু করেন। ১৮ জুলাই মিরপুর ডিওএইচএস থেকে প্রতিবাদের সূচনা হয়। যা ছিল সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সর্বপ্রথম সশরীরে আন্দোলন। মিরপুর, মহাখালি চট্টগ্রামসহ দেশের সবকয়টি ডিওএইচএস থেকে সেনাসদস্যদের পরিবারের সদস্যরা সে সময় রাস্তায় নেমে আসেন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গণঅভ্যুত্থানে দুইভাবে ভূমিকা রেখেছেন। অবসরপ্রাপ্তরা সরাসরি মাঠে নেমেছেন এবং চাকরিরতরা চূড়ান্ত সময়ে অবদান রেখেছেন। আবু সাইদ হত্যার পর সেনাবাহিনীর সব স্তরের সদস্যরা মাঠে নামেন। তাছাড়া ৫ আগস্ট গণভবন ঘেরাও আন্দোলনের সময় রাওয়া সেন্টার থেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের অগ্রযাত্রা এ বিপ্লবকে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে ভূমিকা পালন করে।

বর্তমান পরিস্থিতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

বক্তারা আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাছাড়া বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য এখনো নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে বিগত সরকারের অপরাধীরা। দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার সেনা অফিসার সেনা সদস্যদের সম্পৃক্ত কারার আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে দেশের থানাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া দেশের অনেক খাত আছে যেখানে দেশের প্রয়োজনে তাদের ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দেন তারা।

বক্তারা বলেন, সাবেক ও বর্তমান সৈনিক থেকে সবস্তরের কর্মকর্তারা এই সফলতার অংশীদার। অথচ অভ্যুত্থানের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা অবহেলিত। আমাদের দাবি আদায়ে কোর্টে যাওয়ার অধিকারও নেই। অন্যান্য সেক্টরের মতো মেধাহীন পদোন্নতির মাধ্যমে এই সেক্টরকেও ধ্বংস করা হয়েছে। এ নিয়ে আগে থেকেই সশস্ত্র বাহিনীতে ক্ষোভ ছিল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার নতুন সুযোগ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক, নিবেদিত মানুষ এবং সঠিক তদারকি প্রয়োজন।

তারা বলেন, দেশ সংস্কার কাজে চার জায়গা থেকে জনবল নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি অফিসার, প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব।

অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিগত সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। অনেক সংকট ও ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। চিহ্নিতদের ভাসানচর নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement