ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিল, সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৮:০৯
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন সাংবাদিকরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে কয়েক শ’ সাংবাদিক অংশ নেন।
সমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বলেন, ‘গণহত্যা চালিয়ে এসরকার গণদুশমনে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ এসরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, যত দ্রুত এসরকার বিদায় নেবে ততই জাতি ও তাদের মঙ্গল হবে।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘এ সরকারের হাত সাংবাদিকদের রক্তে রঞ্জিত। আমাদের চারজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, ২০০ জন আহত করা হয়েছে, ৫০ জন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ সরকারের হাত ছাত্রদের রক্তি রঞ্জিত। শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। হাজারো গুলিবিদ্ধ ছাত্র মৃত্যুযন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। ছাত্র খুন করে আপনি (শেখ হাসিনা) গদিতে আরামে থাকবেন এ খায়েশ দেশের মানুষ পূরণ হতে দেবে না। আপনার গদিতে থাকা হবে না। আপনার পতনের মধ্যে দিয়ে ছাত্র হত্যার ফয়সালা করব।’
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ এ সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা দিয়েছে। আজ ঘরে ঘরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ গুলি করতে চায় না। যে পুলিশ কৃষকের ছেলে, যে পুলিশ এ মাটিতে খেয়ে বড় হয়েছে, সে পুলিশ গুলি করতে চায় না। হাসিনার নির্দেশে গুলি করতে হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘গুলি করে ছাত্রদের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো ছাত্রের বুকে ত্রিশ-চল্লিশটা গুলি করা হয়েছে। ছাত্রদের ওপর আপনার ক্ষোভ কেন? সাংবাদিকদের উপর আপনার এত ক্ষোভ কেন?’
ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেহেদী একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক ছিল। কেন তাকে হত্যা করলেন? তিনি তো কোনো পক্ষের ছিলেন না।’
কাদের গনি বলেন, ‘সন্তানহারা মায়ের কান্নায় আল্লাহর আরশ কাঁপছে। আপনার (শখ হাসিনা) বুক কাঁপছে না। প্লিজ এবার পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দিন।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন গতকালকেই হয়ে গেছে। এ সরকারে যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম বা মানবতাবোধ থাকতো তাহলে ছাত্র হত্যার পর পরই পদত্যাগ করতো। জনগণ গর্জে উঠেছে, আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘এ সরকারের লোকেরা যাতে পালাতে না পারে জনগণকে পাহারা দিতে হবে। আমার ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে পালাতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের সকল রেলপথ, রাজপথ, সড়ক পথ, বিমান পথ, নৌপথ বন্ধ করে দিতে হবে। এই হত্যার খুনের বিচার করতে হবে। নাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। দেশের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। এই জাতির কাছে, মানবতার কাছে অপরাধী হয়ে থাকব। সেটা আমরা হতে চাই না।’
রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএফিউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজের সহ-সভাপতি ও ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ আহমেদ, শাহনাজ পলি, এরফানুল হক নাহিদ, এম এ নোমান, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শাহীন হাসনাত, রাশেদুল হক ও দিদারুল আলম।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করেন সাংবাদিকরা। মিছিলটি হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, পুরান পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগানে সাংবাদিকরা মুখর করে তোলেন রাজপথ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা