০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ২৭ সফর ১৪৪৬
`

শান্তিপূর্ণ আলোচনায় না গিয়ে সরকার রক্ত বেছে নিয়েছে : সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

- ছবি : সংগৃহীত

শান্তিপূর্ণ আলোচনায় না গিয়ে সরকার রক্ত বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টায় চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হত্যা ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে করা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল তারা এ মন্তব্য করেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন দুটি। বিক্ষোভ মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে হাইকোর্ট, তোপখানা রোড,পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।

সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকার রক্তের নেশায় উন্মত্ত হয়ে গেছে। ১৭ তারিখ সাতজন ছাত্র হত্যার পর আজ আবার পাঁজজন ছাত্রকে হত্যা করেছে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথকে ছুঁড়ে ফেলে রক্তই বেছে নিল সরকার। যা ফ্যাসিবাদের চরম বহিঃপ্রকাশ।

তারা বলেন, বাংলাদেশে মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সমাবেশ থেকে অভিভাবকদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এভাবে পাখির মতো আমাদের সন্তানদের গুলি করে মারবে আর অভিভাবকরা চুপ করে থাকবো এটা হতে পারে না।

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে এ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বিএফইউজের সহ-সভাপতি এ কে এম মহসিন, সিনিয়র সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল, বিএফইউজে সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সহ-সভাপতি রফিক মোহাম্মদ, ক্রাবের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ আকন, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, দফতর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, তালুকদার রুমি, সাবেক দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য এইচ এম আল আমিন প্রমুখ।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিকে অত্যন্ত যৌক্তিক উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মনে করি। আমরা মনেকরি, ‘কোটা কখনো মেধার বিকল্প হতে পারে না'। এ কোটার কারণে প্রতিভাবান অনেক চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন।
কোটা ব্যবস্থার বিলোপ হলে সকল প্রার্থীর মধ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এতে করে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা তাদের প্রকৃত প্রতিভার স্বীকৃতি পাবেন এবং যোগ্য প্রার্থীদের মাধ্যমে সরকারি খাতে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যোক্তিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের দাবি না মেনে বল প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, গত ক'দিন ধরে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্বিচার হামলা চালানো হয়েছে। সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পিস্তল, রড, লাঠি, হকিস্টিক, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। নির্বিচার হামলায় নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পায়নি। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার ও আজ ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে। আমাদের সন্তান সমতূল্য কোমলমতি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত হতে দেখেছি। এ পর্যন্ত আন্দোলনরত ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রক্তে ঢাকা, চট্টগ্রাম , রংপুর ও মাদারীপুরের পিচঢালা কালো রাস্তা আজ লালে লাল হয়ে গেছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল সরকার আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে উদ্যোগী হবেন। কিন্তু সরকার তা না করে রক্তকেই বেছে নিয়েছে। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকার যেভাবে ছাত্র হত্যার মহোৎসবে নেমেছে তা একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। একাত্তরে ভিন দেশ থেকে এসে আমাদের হত্যা ও নির্যাতন করেছিল। আর আজ এদেশের সিংহাসনে বসে মানুষ হত্যা, গুম ,খুন করা হচ্ছে। এ লজ্জা রাখি কোথায়?

তিনি বলেন, একের পর এক কোমলমতি ছাত্র হত্যার ঘটনায় আমরা শুধু উদ্বিগ্নই নই, ক্ষুব্ধ ও বেদনার্তও।‘জাতির কাঁধে ছাত্রের লাশ’ এরচেয়ে বেদনার খবর আর কি হতে পারে? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে আর কত রক্ত আপনাদের প্রয়োজন?

পুলিশের সমালোচনা করে সাংবাদিক এ নেতা বলেন, আপনারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী। কোনো দলের ঠেঙ্গারে বাহিনী নন। তাই নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন। আমাদের সন্তানের বুকে গুলি চালাবেন না। আমাদের একদফার দাবিতে মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না। আমরা মাঠে নামলে শ্রীলঙ্কার পরিণতি আপনাদের বরণ করতে হবে।

সমাবেশে এম আজিজ বলেন, ২০১৮ সালে রাগ করে প্রধানমন্ত্রী এই কোটা বাতিল করেছেন। আইনে যদি দেখেন তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন না। আমি বলবো আসুন সবাই রাজপথে আমাদের সন্তানদের পাশে থাকি৷ আর যারা এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থাকবে না তারা ছাত্রলীগের বন্ধু। এ জাতি তাদের ক্ষমা করবেন না।

এই সরকারের আমলে সাগর রুনি থেকে ৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। একটা হত্যারও বিচার করা হয়নি। তারা ক্ষমতায় এসে দিগন্ত টিভি, দিনকাল, আমার দেশসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে। সর্বপরি এই সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এখন সাধারণ ছাত্রদের পর পুলিশ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে। তারা যখন ছাত্রদের ওপর হামলা করে তখন সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। হামলার শিকার সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও জানান তিনি।

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে দেশে যে ছাত্রজাগরণ গড়ে উঠেছে সেটাকে গণজাগরণে পরিণত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, পুলিশের সামনে সরকারিদলের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে; আর তারা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলো। কোথাও কোথাও পুলিশ আর সরকারি দলের ক্যাডারটা যৌথভাবে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আহত ও রক্তাক্ত ছাত্ররা যখন কাতরাচ্ছে তাদের হসপিটালে নেয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত পুলিশ করেনি। এমনকি আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পথে বাধা দেয়া হয়। হামলা থেকে শিক্ষকরাও রেহাই পায়নি। অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে জরুরি বিভাগে থাকা অবস্থায় তাদের ওপর আবারো হামলা চালানো হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য। আমরা এসব হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি চাই।

ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। এর ফলে ১০টি তরতাজা প্রাণ ঝড়ে পড়লো। এর দায় সরকার কিছুতেই এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, সরকারের সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠন দিয়ে সরকার শুধু আমাদের সাংবাদিকদের ওপর নয়, আমাদের সন্তানদের ওপর, নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে সকল হত্যা ও নির্যাতনের দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান এই সাংবাদিক নেতা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন অত্যন্ত যুক্তি সঙ্গত। আমি দেশবাসীকে ছাত্রদের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের দফতর সম্পাদক আবু বককর, নির্বাহী সদস্য আবু হানিফ, ডিইউজের ক্রিড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক কবি রফিক লিটন, নির্বাহী সদস্য নিজাম উদ্দিন দরবেশ ও এম আব্দুল্লাহ।


আরো সংবাদ



premium cement