০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ২৭ সফর ১৪৪৬
`

‘সরকার ভারতের সাথে গোলামীর চুক্তি করেছে’

- ছবি : সংগৃহীত

‘ভারতের সাথে অসম চুক্তি-বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রাজনীতিবিদ ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলেছেন, ‘রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিলিন করে সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে ভারতের সাথে গোলামীর চুক্তি করেছে।’

শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সঞ্চালনা করেন ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান।

তারা বলেছেন, ‘সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে একের পর এক ভারতকে সমুদ্র বন্দর করিডোর, স্থল বন্দর করিডোর, নদী বন্দর করিডোর এবং সর্বশেষ রেললাইন করিডোর দিয়েছে। বিনিময়ে গত এক যুগে সীমান্তে বিএসএফের হাতে এক হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ভারত আমাদের ওপরে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সাথে ১২০টি গোলামীর চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে ভারত লাভবান হচ্ছে, কিন্তু আমাদের দেশের জনগণের কোনো লাভ হচ্ছে না।’

নব্বই দশকের আন্দোলনের নেতা শাহজাহান মিয়া সম্রাট বলেন, ‘জহরলাল নেহেরু ডাইনেস্টির মাধ্যমে দেশকে ভারতের সাথে একীভূত করতে কাজ করে যাচ্ছে। নেহেরু ডকট্রিন বাস্তবায়নের জন্য ভারত অবৈধভাবে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রো ভিসি দেওয়ান সাজ্জাদ বলেন, ‘জাতির বিবেক সাংবাদিকদের কাছে আহ্বান, দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য ভূমিকা রাখলে বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হতে ব্যর্থ হবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে বিক্রি করতে পারবে না। ষড়যন্ত্রকারী বুদ্ধিজীবীদেরকে আশু পরিণতি সম্পর্কে সজাগ করতে হবে। ভারতের আগ্রাসনের কারণে আজ বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব হারাতে বসেছে, মানুষের ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, বাক-স্বাধীনতা নাই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই।’

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে আন্দোলনকে কিভাবে সফল করতে হয়। পাশাপাশি ছাত্ররা যেভাবে সমগ্র বাংলাদেশে তাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টি করেছে তা থেকে বিরোধী সকল দলকে ভাবতে হবে। ব্রিটিশ ওয়াইনের বিনিময়ে দু’টি জাহাজ দিয়ে ২০০ বছর ভারতকে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করেছে। বর্তমান সরকার বিদেশী রাষ্টের সাথে চুক্তি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারলেও জনগনের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।’

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুল করার কারণে তৎকালীন সরকার চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। বর্তমানে সরকার ভারতকে একচেটিয়া সুবিধা দেয়ার কারণে আবার ভূ-রাজনৈতিক রাজনীতির ভূল পদক্ষেপ নিয়েছে। এর কারণে চীন থেকে প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরি এসেছে। এখন প্রয়োজন বিরোধী জোটের কূটনৈতিক উপায়ে এই সুবিধা ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।’

বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. অ্যাডভোকেট মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৪ দিনে ভারত সফর করেছে দু’বার। ভারতের কাছ থেকে চীন সফরের সবুজ সঙ্কেত নিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। সদ্য ভারতের সাথে যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্যরাও ক্ষমতা ও দুর্নীতির স্বার্থে সংসদে এই বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা তোলেননি। আমলাদের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিরব দর্শক করে রাখা হয়েছে। চলমান কোটা বাতিল আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি।’

তিনি বর্তমান সরকারকে হটানোর জন্য বিরোধী দল ও সচেতন জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন করার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের উদাত্ত আহ্বান জানান।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির মাধ্যমে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের হত্যা করতে চায়। বাংলাদেশকে পঙ্গু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে পরাধীন করতে চায়।’

সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম বলেন, ‘সরকার দেশ ও দেশের জনগণকে হতাশাগ্রস্ত করে রেখেছে। চুক্তি অনুযায়ী হিস্যার পানি না পেলেও বাঁধ খুলে দিয়ে দেশের উত্তর অঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে পানিবন্দী করে রেখেছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুক্তি ও সমঝোতা করছে সরকার। আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী যারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই রাষ্ট্রকে শাসন করতে পারে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে শাসন করে চলছে। দৈনিক আমার দেশ ও দিগন্ত টেলিভিশনকে বন্ধ করে গণমাধ্যমকে ভারত বিরোধিতার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। দেশের বুক চিরে রেল করিডোরের নামে ভারতকে আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহারে বাধা দিতে বুকে রক্ত ঢেলে দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও পেশাজীবী আন্দোলনের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতের রেল এপার-ওপার চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যাদের সাথে তাদের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নেই। ভারতের আগ্রাসী শাসনের ফলে নেপাল ও ভুটানের মতো দেশের জনগণ তাদের দেশ থেকে ভারতীয় তাবেদারকে হটিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও ভারতের দাদাগিরিকে মেনে নিতে পারছে না। ২৮ বছরেও গঙ্গা চুক্তির হিস্যা অনুযায়ী কোনো কিছুই বাংলাদেশ পায়নি। ভারত পরিকল্পিতভাবে আসাম ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে লোক ঢুকাচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’

রাষ্ট্রচিন্তক ও ইয়ুথ ফোরামের সভাপতির এস নাজমুল হাসান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাই। জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভারতের সাথে চুক্তি করছে বর্তমান সরকার। ভারতের কাছে ক্ষমতার দায়বদ্ধতা থেকে ভারতকে আজীবন খুশি রাখতে সবকিছু দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের জন্য কিছুই করছে না।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে দেশকে অকার্যকর ও ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি করেছে। এক এগারো করা হয়েছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার জন্য। মাইনাস ওয়ানের প্রধান টার্গেট ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে বাংলাদেশে পূণরায় প্রতিষ্ঠার কারণে গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুফল যখন জনগণ ভোগ করছিল, তাকে নস্যাৎ করাই ছিল প্রতিবেশী দেশের মূল লক্ষ্য। মিডিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদের পরিচয় উন্মোচিত হওয়ার পরেও আইনের মুখোমুখি না করে নিরবে দেশত্যাগ করতে সাহায্য করছে বর্তমান সরকার। পানি নিষ্কাশনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বাজেট পাওয়ার পরেও ঢাকা শহর এখন জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিটি করপোরেশনের নেই কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা। সরকার জঙ্গি নাটক নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু কিশোর গ্যাং ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেই। সরকারের রাজনৈতিক বন্ধু ভারতের বিএসএফ প্রায়ই সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করছে। সীমান্ত জুড়ে মাদকের কারণে বাংলাদেশের যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। দেশজুড়ে মাদকের ভয়াবহতা।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুদক অভিযুক্ত করেই শেষ, নেই কোনো ফলপ্রসু পদক্ষেপ। দেশে যখন যুবকরা বেকারত্বে অভিসাপ নিয়ে ঘুরছে, তখন অবৈধ ভারতীয়দের চাকরির বিরুদ্ধে সরকার চুপ। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় পায় না, তাদেরকে ভারতের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হলেই এই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদেরকে ভারতের আগ্রাসনে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement