ভর্তুকি ও মূল্য বাড়ানো সত্ত্বেও ২০২৫ সালে বাড়বে পিডিবির লোকসান : সিপিডি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ জুন ২০২৪, ২২:৫১
সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চলমান লোকসান ১৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এছাড়াও বিদ্যুতের দাম ও সরকারি ভর্তুকি বাড়ানোর পরও পিডিবি বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছে সিপিডি।
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাকে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাবিত করণীয়' শীর্ষক উপস্থাপনায় এসব কথা তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারের পরিকল্পনা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। সেসময় ২৫ শতাংশ বাড়তি মজুদ থাকলেও সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎই যথেষ্ট।
তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত সক্ষমতার কারণে জ্বালানি সঙ্কট এবং বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোডশেডিং হচ্ছে।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। ফলে পিডিবির লোকসান বাড়ছেই। এর প্রভাবে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দামও বাড়ছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও সরকার ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের অতিরিক্ত খরচ (ক্যাপাসিটি চার্জ) বহন করছে। এই সক্ষমতা দেশের অর্থনীতির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন না করলেও তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এই চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা এখন সরকারি তহবিল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ব্যবহার না করা হলেও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে কেন?
সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরো বলেন, সরকার এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করেছে তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। আজ থেকে ৬ বছরের মধ্যে চাহিদা ১৯৪০০ মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে। ২৫ শতাংশ মজুদ বিবেচনায় নিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রয়োজন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট।
তিনি আরো বলেন, সক্ষমতা বাড়লেও দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রীষ্মে গড় লোডশেডিং হয় ১১০০ মেগাওয়াট। বাজেটে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। এ খাত নিয়ে সরকার কী করবে সে বিষয়ে সবাই অন্ধকারে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ দাবি করে দাম বাড়ানো হলেও লোডশেডিং কমেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ কে আজাদ আরো বলেন, ‘৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে হয়। এতে খরচ বেড়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
সভায় আরও ছিলেন বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম তামিম, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, ভোক্তা অধিকার সংস্থা ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
সূত্র : ইউএনবি