ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর ইন্তেকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শোক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:২১
দৈনিক দিনকাল সম্পাদক ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
আজ বুধবার বিএসপিপির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ শোক প্রকাশ করেন।
শোক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে রেজোয়ান সিদ্দিকী সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে এই পেশার উৎকর্ষে অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন। সত্যনিষ্ঠ ও প্রজ্ঞাবান এই সম্পাদকের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
শোকবার্তায় বলা হয়, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন, রেজোয়ান সিদ্দিকী তাদের অন্যতম। বিশেষ করে স্বেরাচারী সরকার এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণমাধ্যমের ওপর খড়গ নেমে এলে রেজোয়ান সিদ্দিকী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি।
সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতা ড. রেজওয়ান সিদ্দিকীর জন্ম টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে, ১৯৫৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পিতা মরহুম আতিকুল হোসেন সিদ্দিকী এবং মাতা মরহুমা হাওয়া সিদ্দিকী। এলাসিন তারক যোগেন্দ্ৰ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন করটিয়া সা’দত কলেজে। জড়িয়ে পড়েন বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে। ‘৬৯-এর সামরিক শাসনের পর মাথায় হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপন করেন। ১৯৭০ সালে আবার ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (১৯৭৬) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এমফিল-এ ভর্তি হন, পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৫ সালে। এর মধ্যে ১৯৯০-৯১ সালে হল্যান্ডের হেগ নগরীর ইনস্টিটিউট অব সোশাল স্টাডিজ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উন্নয় বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
জীবনের লড়াই শুরু করেছিলেন সেই ১৯৭০ সাল থেকেই। সংবাদপত্রের সকল বিভাগে দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। ১৯৭২ সালে যোগ দিয়েছিলেন দৈনিক বাংলায়। কাজ করেছেন ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত। ‘৯৪-৯৬ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দিনকাল-এ বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে যোগ দেন লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশ পত্রিকার বাংলাদেশস্থ আবাসিক সম্পাদক হিসেবে। ২০০২ সালে সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী লিখে গেছেন অবিরাম। সংবাদপত্রে কলম ধরেছিলেন ১৯৭২ সালের শুরু থেকে। ওই কলম কখনো থামেনি। ছোটগল্প লিখেছেন দুই শতাধিক, উপন্যাস ৯টি, প্রত্যেকটি ব্যতিক্রম। লিখেছেন ফিকশন, রাসপুটিনের জীবনী, অনুবাদ, নাটক, প্রবন্ধ। আর সমালোচনায় আছেন অগ্রণী, খবরের কাগজের কলাম তো আছেই। টেলিভিশনের উপস্থাপক, সাংবাদিকতা ও পরিবেশবিষয়ক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। ছুটে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। তার সাড়া জাগানো গবেষণা ‘পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সাড়া জাগানো বইয়ের মধ্যে অন্যতম ‘কথামালার রাজনীতি’।
জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে লড়াই করে গেছেন ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী। সরকারি রোষে জেল খেটেছেন, হয়রানি, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। ওনার সম্পাদিত দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটিও সরকারের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি