‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমকে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে’
খুলনায় সেমিনারে বিএফইউজের সভাপতি- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৪
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। নির্বাচন প্রথার দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছে। অপশাসন কায়েম করায় সারা বিশ্ব এই সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের মাধ্যমে জনগণের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনতে পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে গণমাধ্যমকে সাহসী ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
শুক্রবার খুলনায় এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজের সভাপতি এসব কথা বলেন। সকালে নগরীর হোটেল এ্যাম্বাসেডরের সেমিনার রুমে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার (এমইউজে) উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এমইউজে সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ১৪ বছর দেশের পেশাজীবীদের মধ্যে সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি অত্যাচার নির্যাতন, গুম-খুন ও মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছে। কে ক্ষমতায় যাবে বা কাকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে তা নির্ধারণ করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব নয়। কিন্ত দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, ভোটাধিকার না থাকে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে- সে সময় কলম ধরা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব।
সাংবাদিকরা আজ সত্য প্রকাশ করতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র ১৪ বছরে ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার এক যুগ পেরিয়েছে। আজও চার্জশিট দাখিল হয়নি। এমইউজের সাবেক সভাপতি শেখ বেলালউদ্দিন হত্যার ১৮ বছর পার হয়েছে। ন্যায়বিচার হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যম আইনসহ নানা কালাকানুন জারি করে সাংবাদিকদের মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমগুলো আজ কর্পোরেট মালিকদের হাতে বন্দী বলে অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদপত্রের সংকট নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রী সাথে দেনদরবার করেন। কিন্ত সাংবাদিকের সত্য প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। মালিকরা সরকারের কাছে আত্মা বিক্রি করেছেন। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কখনো সত্যিকারের গণমাধ্যম হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার, মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনো একসাথে যায় না দাবি করে তিনি বলেন, তারা ক্ষমতা পেলেই গণতন্ত্রের গলাটিপে ধরে। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছে সবাইকে চরম পরিণতির শিকার হতে হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং শত শত অনলাইন মিডিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
আলোচনা সভার প্রধান বক্তা বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, সরকার গণতন্ত্রকে কফিনে ভরে ফেলেছে। এখন তাকে সমাধিস্থ করার চেষ্টা চলছে। গণতন্ত্রকে কফিনমুক্ত করতে হলে গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোঃ জাকির হোসেন ও বর্তমান সহ সভাপতি মোঃ রাশিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন।
কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ গাজী আব্দুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, মুসলিম লীগের মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু বিএফইউজের নির্বাহী নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ জাকির হোসেন, এমইউজের সদস্য মোঃ এরশাদ আলী ও কবি হেফজুর রহমান।
এমইউজের সহ সভাপতি এহতেশামুল হক শাওনের সঞ্চালনায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ আব্দুল্লাহ বিন আজাদ।
আলোচনা সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আঞ্চলিক সংবাদ ক্যাটাগরিতে একাধিকবার সম্মাননা পদক লাভ করায় এমইউজের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান হিমালয়, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন এবং এমইউজের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নুরুজ্জামানকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল খালেক আজীজী, কে এম জিয়াউস সাদাত, হারুন অর রশিদ, শামসুল আলম খোকন, শামসুদ্দিন দোহা, আহমদ মুসা রঞ্জু, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।