১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশের স্বার্থে ভেপিং নিষিদ্ধের উদ্যোগ বাতিল করতে হবে : বেন্ডস্টা

ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশের স্বার্থে ভেপিং নিষিদ্ধের উদ্যোগ বাতিল করতে হবে : বেন্ডস্টা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভেপিং নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সকল অংশীজনের সাথে পরামর্শ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা)। ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর পুনরায় সংশোধনের খসড়া থেকে অবিলম্বে ভেপিং বা ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে (ই-সিগারেট) বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা শঙ্কা প্রকাশ করছে যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমলে না নিয়ে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে ভেপিং নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ধূমপান হ্রাসের পরিবর্তে বেড়ে যাবে, যা প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেন্ডস্টা জানায়, দেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে অনেকে আবার প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাবে। এতে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরকার হারাবে রাজস্ব আয়ের একটি খাত।

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনের খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনের সংশোধনের উদ্যোগে বেন্ডস্টাসহ অন্যান্য অংশীজনকে সম্পৃক্ত না করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ উজ জামান।

তিনি বলেন, ভেপিং নিয়ে কোনো আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে আমরা হবো তার অন্যতম অংশীজন। আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা না করে এতদূর এগিয়ে যাওয়াটা অযৌক্তিক। এ নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর দুইবার চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও আমাদের সাথে তারা কোনো আলোচনায় বসেনি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যের বরাতে জামান বলেন, বাংলাদেশে ২০১০ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার (৪৪) শতাংশ ছিলো, যা ২০২০ সালে কমে ৩৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপায়ীর হার ফের বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হবে। এমন বাস্তবতায় ভেপিং নিষিদ্ধ করা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিপন্থী।

জামান বলেন, ভেপিং নিষিদ্ধের বিষয়ে সবসময় ভারত ও থাইল্যান্ডের উদাহরণ দেয়া হয়। কিন্তু ভারতে ভেপিং নিষিদ্ধ করার পরও দেখা গেছে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এখনো বেআইনিভাবে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যারা সম্প্রতি থাইল্যান্ডে গিয়েছেন তারাও বলেছেন সেখানে অনেকে রাস্তায় প্রকাশ্যে ভেপ করছে।

বেন্ডস্টা সভাপতির শঙ্কা, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভেপিং নিয়ে সরকারকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ যেখানে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য উন্নত দেশের সরকার ধূমপান ছাড়ার অন্যতম বিকল্প হিসেবে ভেপিংকে বেছে নিচ্ছে, সেখানে দেশে তা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

জামান বলেন, তামাকবিরোধী এনজিওগুলো কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই ভেপিং নিয়ে ভুল মন্তব্য করে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থাগুলোর টাকার লোভে এই সকল পণ্যে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছে। এনজিওগুলোর দেখানো পথে চললে দেশের উপকারের তুলনায় অপকার বেশি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি । অথচ যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি যা পূর্বে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল, তাদের সাড়া জাগানো গবেষণা অনুযায়ী, প্রচলিত সিগারেটের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর ভেপিং। অপরদিকে ভেপিং এর কারণে হার্টে সমস্যা হয়, ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয় এই ধরণের গবেষণাগুলো তাদের প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতির জন্য বৈশ্বিক জার্নালগুলো থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ।

যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকেরা তামাক সেবন ছাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর সহায়ক হিসেবে ভেপিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফিলিপাইনের কংগ্রেসের শুনানিতে, খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিই সিগারেটের তুলনায় ভেপিং অনেক কম ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বেন্ডস্টা সহসভাপতি আনিসুজ্জামান নাসের খান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনের নাম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। যেখানে ভেপিংয়ের সাথে তামাকের কোনো সম্পর্কই নেই, সেখানে ভেপিংকে কেন জড়ানো হলো? যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কনজুমার চয়েস সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভেপিংকে উৎসাহিত করা গেলে বাংলাদেশে ৬২ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী প্রচলিত সিগারেট ছাড়তে পারবেন। ভেপিং নিষিদ্ধ করে ধূমপান হ্রাসের এই সম্ভাবনাকে কেন
নষ্ট করা হবে? যে দেশগুলো ভেপিং বন্ধ করেছে অনেক ক্ষেত্রেই সেখানকার প্রাপ্তবয়স্ক বয়স্ক ধূমপায়ীরা যারা ধূমপান ছেড়ে ভেপিং শুরু করেছিল তাদের ধূমপানের হার বেড়ে গেছে। ভেপিং বন্ধ করলে যদি বাংলাদেশে তামাক সেবন বৃদ্ধি পায় এর দায়ভার কে নেবে?

বেন্ডস্টা, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া থেকে ভেপিংকে বাদ দেয়া, কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংগঠনটির সাথে আলোচনা করা, এবং ভেপিংকে তামাক পরিত্যাগ সহায়ক পণ্য হিসেবে মূল্যায়ন করে পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সংবাদ সম্মেলনের দাবি তোলা হয়।

জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক পরিত্যাগ সহায়ক পণ্যগুলোকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বৈধ করতে হবে।

-প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement