ভিন্নমত দমনে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলের আচরণে বিএফইউজের উদ্বেগ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:০৮, আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:০৯
ভিন্নমত দমনে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলের নিবর্তনমূলক, আগ্রাসী ও নিষ্ঠুর আচরণ গভীর উদ্বেগ এবং শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী পরিষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এ উদ্বেগ জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ। সঞ্চালনা করেন মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন।
সভায় বলা হয়, সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতেই সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকদেরও ভয়ভীতি দেখানোর কৌশল নিয়েছে। এজন্য তারা সম্প্রতি রাজধানীতে বিএনপির নিখোঁজ এক নেতার বাসায় গেলেমার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এমন ঘটনায় বিএফইউজে নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
নির্বাহী পরিষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, মানবতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গুমের শিকার হয়ে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ কোনো নাগরিকের বাসায় সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সরকার ও তাদের সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটিকে বিতর্কিত করতেই ওই বাসার সামনে গিয়ে নজীরবিহীন হট্টগোলের সৃষ্টি করে। এতে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। পরবর্তীতে সরকারের সুবিধাভোগী কতিপয় নাগরিক বিবৃতি দিয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনার পক্ষে সাফাই গাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের মানবাধিকারবিরোধী চরিত্র উন্মোচন করেছে বলেও সভায় বলা হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে শক্তিপ্রয়োগের পথ পরিহার করে পরমতসহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার বিষয়ে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি'র অফিস তছনছ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুরাল ভাঙচুর, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানসহ বহুসংখ্যক জাতীয় নেতা এবং কয়েক শ‘ নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, বিএফইউজের সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, রাশিদুল ইসলাম ও ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহকারী মহাসচিব নাসির আল মামুন ও শফিউল আলম দোলন, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, দফতর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান, নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন, আবদুস সেলিম, জিয়াউর রহমান মধু, শামসুদ্দিন হারুন, এ কে এম মহসীন ও জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক গণেশ দাস, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি জি এম আশেক উল্লাহ, কুমিল্লা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রমিজ খান, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি আইয়ুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমেদ ও সহসভাপতি এম এ কাদের তফাদার প্রমুখ।
সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে যে নাভিশ্বাস চলছে, তা থেকে মুক্ত নয় গণমাধ্যমকর্মীরা। এ অবস্থায় তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের খড়গ এবং অন্যদিকে মামলা-হামলার ভয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। এ পরিস্থিতির অবসানে সকল কালাকানুন বাতিল করে সুস্থ ও স্বাভাবিক সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভার আরেক প্রস্তাবে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী সবার মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অথচ সংবিধান সংরক্ষণের শপথ নিয়ে সরকার প্রতিনিয়ত তা লঙ্ঘন করে চলেছে। একদিকে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমর্থিতরা যখন খুশী, যেখানে খুশী নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে পারছে। পক্ষান্তরে সরকারবিরোধী মনে হলে শর্তের বেড়াজালে আটকে আর নানা অসদুপায়ে তাদের সভায় বাধা দেয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীরা যৌথভাবে মহড়া দিয়ে একটানা কয়েক দিন নাগরিক জীবনে যে অচলাবস্থা তৈরি করে রেখেছিলেন, তা গণতন্ত্রের জন্য কেবল অশনি সঙ্কেত নয়, একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে বলেও সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়।
সভায় বিএফইউজের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এবং নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সারা দেশের সাংবাদিক ও হত্যার শিকার সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় একটি জাতীয় কনভেনশন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।