ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ
প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের ৮ দফা দাবি- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ জুন ২০২২, ১৭:০৩
পদ্মা সেতুর জাঁকজমক উৎযাপন না করে প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীদের দুর্দশা এবং তা থেকে মুক্তির উপায়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা প্রদানকালে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ আহ্বান জানান। সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারী ঐক্য পরিষদ।
এ সময় ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, দেশের ২২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে আর আপনি ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে ১০ লাখ মানুষের জনসমাবেশ করছেন। তাও এমন একটা সময়ে যখন দেশের দুই কোটি পরিবার ঈদ করতে পারবে না। এরসাথে যোগ হয়েছে বন্যায় আরো ৫০ লাখ মানুষ।
দেশি পোল্ট্রি চাষিদের বাঁচাতে নীতিমালা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, নীতিমালা না হলে সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়ে শিক্ষিত যুব সমাজকে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছর। আজকে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পুষ্টি। যেটি জোগাড় করেছেন প্রান্তিক চাষিরা-খামারিরা। এখানে বড়দের কোনো অবদান নেই।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনি এতো বড় কাজ করতে যাবেন না। এখন একটু দেশের দিকে নজর দেন। চাষি, খামারি ও প্রান্তিক জনগণের প্রতি নজর দেন। এরা আপনাকে বাঁচাবে। তা না হলে তাদের মতো আপনাকেও ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট ভোগ করতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, প্রান্তিক এসব খামারিদের বাঁচাতে আমাদের একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এই দেশটাকে বড় পুঁজিবাদীদের
হাতে তুলে দেব নাকি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর হাতে দেব।
তিনি বলেন, দেশের বড় পুঁজিবাদীরা ছোটদের খেয়ে ফেলতে চাচ্ছে কিন্তু তারা জানে না- আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বড় ও ছোট একসাথে বসবাস উপযোগী করে রেখেছেন। এর বাইরে গেলে ধ্বংস নেমে আসে।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি এক খবরে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। এই টাকা এসব প্রান্তিক মানুষের ঘামে ভেজা কষ্টের টাকা। অথচ আমাদের সরকার বলেছে এই টাকার ৭ শতাংশ সরকারকে দিলে বৈধ হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের ৮ দফা দাবি জানান বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারি ঐক্য পরিষদের মহাসচিব কাজী মোস্তাফা কামাল। দাবিগুলো হলো-
১. কোনো হ্যাচারীর মালিক বাণিজ্যিকভাবে রেডি ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগি পালন করতে পারবে না। তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২. খাদ্যের দাম কমাতে হবে। খাদ্য ও বাচ্চার মান প্রানীসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে।
৩. খামারিদের বিদ্যুযত বিল, শিল্প হারে নিতে হবে।
৪. বিগত ০৭/০৩/২০১০ তারিখে সরকার কর্তৃক নিধারিত ১ দিনের ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চার দাম ৩০ ও ৩২ টাকা হারে দিতে হবে।
৫. রানীক্ষেত, গাম্বরো ও বার্ডফ্লু জাতীয় জটিল রোগের টিকা ও ঔষধ বিনামূল্যে খামারিদের দিতে হবে।
৬. সকল খামারিদের একটি সমিতির আওতায় এনে জামানত ছাড়া ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. প্রাকৃতিক দুর্ভোগে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ভুর্তকি দিতে হবে। অথবা ইন্সুরেন্সের আওতাভুক্ত করে ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
৮. প্রত্যেক উপজেলার প্রধান বা বড় বাজারগুলোতে খামারিদেরকে সমিতি’র অনুকূলে ২/৩ শতক জায়গাও ওপর মুরগি ও ডিম বিক্রির দোকান নির্মাণ কর দিতে হবে।
পরিষদের সভাপতি মিজান বাশারের সভাপতিত্বে ও শাহিন হাওলাদারের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিদ দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব কাজী মোস্তফা কামাল, বক্তব্য রাখেন লেখক ও পরিবেশ সাংবাদিক ইরানি বিশ্বাস, খুলনা পোল্ট্রি ফিড ফিসের এস এম সোহরাব, কিশোরগঞ্জ পোল্ট্রি ডিলারের সভাপতি শরীফ উদ্দিন, পোল্ট্রি মার্কেট দাউদকান্দি ফিরোজ খান, নরসিংদী পোল্ট্রি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক
আবু নাসের সবুজ প্রমুখ।