প্রস্তাবিত বাজেট : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রতিক্রিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুন ২০২২, ২১:০০
জাতীয় সংসদে দেয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। প্রস্তাবিত বাজেটকে তারা অবাস্তব, উচ্চাভিলাষী ও ঋণনির্ভর বলেছেন। এই বাজেট জাতীয় সংসদ থেকে প্রত্যাহার করে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে শ্রমিকবান্ধব বাজেট পেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক কল্যাণের নেতৃবৃন্দ।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ঋণ-নির্ভর ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন। ইতোমধ্যেই অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা এ বাজেটকে অবাস্তব বাজেট বলেছেন। কারণ বড় বাজেট পেশ করা হলেও এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাজেটটি মূলত অবাস্তব, উচ্চাভিলাষী ও ঋণনির্ভর। বলা যায়, অতীতের ন্যায় গতানুগতিক বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ও প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবতা বিবর্জিত ও কল্পনা নির্ভর। বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। চলতি বছর বাজেটের বেশির ভাগই সরকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ, আর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে জিডিপির ৫.৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট ও প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবতা বিবর্জিত ও কল্পনা নির্ভর। প্রস্তাবিত বাজেটে মোটএডিপি ধরা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৬৬ কোটি টাকা, রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে (বৈদেশিক অনুদানসহ) চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আয় করতে হবে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা আদায় করা প্রায় অসম্ভব দেশের ব্যাংকিং খাত সঙ্কটে রয়েছে। বাজেটে ব্যাংক থেকে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতকে আরো সঙ্কট আরো প্রকট হবে। এভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাস্তব ও সমস্যা সৃষ্টি করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এবারও বাজেটে কৃষিখাতে অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বরাদ্দ অপ্রতুল। উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাস, রাসায়নিক সারের মূল্য কমানো, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের দিকেও বাজেটে বিশেষ মনোযোগ নেই। শিল্পখাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় তিন কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। একে একে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতসহ শিল্পখাতকে পুরোপুরি অবহেলিত রাখা হয়েছে।
তারা বলেন, বরাবরের মতোই যে সকল হতদরিদ্র, দিন আনে দিন খায় ও অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে সকল শ্রমিকরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী বাজেট থেকে কোনো প্রকার লাভবান হচ্ছে না। প্রস্তাবিত বাজেটের মেগা প্রকল্পসমূহের ধার মেটাতে ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। দরিদ্র জনগণকে উপোস রেখে উন্নয়নের নামে এই সকল প্রকল্পে দুর্নীতির উৎসব চলছে। অথচ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পই এখন অপ্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতি আর লুটপাটে দেশের স্বাস্থ্যখাত বিপর্যস্ত। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরাই চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। সেই স্বাস্থ্যখাতেও সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় করতে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে নিয়ে নিলে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। যা কোনোভাবেই একটি সরকারের দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না। আর বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয়। তাই জনগণের স্বার্থ বাদ দিয়ে এক শ্রেণির মানুষের তাবেদারি করে যাচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি না থাকায় ক্ষমতাসীনরা নিজেদের পকেট ভারী করার কাজে ব্যস্ত। আমরা বাংলাদেশের মেহনতি শ্রমিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখান করলাম।
নেতৃবৃন্দ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবিলম্বে এই বাজেট জাতীয় সংসদ থেকে প্রত্যাহার করুন। পুনরায় দেশের মানুষের কথা, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে শ্রমিকবান্ধব বাজেট পেশ করুন। দেশের শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলে কোনো উন্নয়ন দেশের কাজে আসবে না। দল-মত নির্বিশেষে বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে নতুন বাজেট প্রণয়ন করুন। অন্যথায় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য আমরা শ্রমজীবী মানুষদের সাথে নিয়ে আগামী দিনে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হব।
সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি