জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘিরে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তায়নের অপচেষ্টা দুঃখজনক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুন ২০২২, ১৮:৩৬
‘গণতন্ত্র স্কোয়ার’খ্যাত জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ঘিরে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে মহল বিশেষের হীন অপচেষ্টায় বিস্ময়, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদকি ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)‘র নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিএফইউজে‘র সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে‘র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ধ্বংস করতে রাজনৈতিক দলের সভা-সেমিনারের জন্য হল ভাড়া বন্ধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে, যা অগণতান্ত্রিক, অগঠনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সদস্যদের নিরাপত্তা, সভা-সমাবেশ আয়াজনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমরাও চাই। সেটা হতে হবে যুগ যুগ ধরে অনুসৃত ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রথা সমুন্নত রেখেই।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একটি আলোচনা সভা ছিল। ওই দিন দুপুরে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন যে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে ছাত্রদলের একটি মিছিল থেকে তাকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)‘র সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন তাৎক্ষণিকভাবে ওমর ফারুক ও প্রত্যক্ষদর্শী প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলমের সাথে কথা বলেন। মাঈনুল আলম জানান, অডিটরিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা একটি ঝটিকা মিছিল প্রেস ক্লাব আঙ্গিনায় প্রবেশের পর তাদের সামনে পড়ে যাওয়ায় ওমর ফারুকের গায়ে খানিক ধাক্কা লেগেছে। ওমর ফারুক ঘটনাটিকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ ঘটনাটিকে অনাকাঙ্খিত হিসেবে বর্ণনা করে সহানুভূতি প্রকাশ করেন। পরে বিএফইউজে‘র সভাপতি ও মহাসচিবের উপস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন জনাব ওমর ফারুকের সাথে তার অফিসে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই বিষয়টি আন্তরিক পরিবেশে নিষ্পত্তি হয়।
বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, ওই দিনের বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে হামলা হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। আবার সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় প্রেস ক্লাব আঙ্গিনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে বিবৃতিতে। প্রেস ক্লাব আঙ্গিনা সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে, হামলার ঘটনা ঘটে থাকলে তা সিসি ক্যামেরা ফুটেজের মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষ। এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি।
এদিকে ওমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন বিএফইউজে রাজনৈতিক দলের সভা করার অনুমতি না দিতে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করেন বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে হল ভাড়া দিয়ে অর্জিত অর্থই ক্লাবের আয়ের প্রধান উৎস। একই সাথে প্রেস ক্লাবের হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরের যে দাবি তোলা হয়েছে তাও ক্লাবের অনুসৃত নীতি, প্রথা, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও উদ্দেশ্যমূলক ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার যখন বিরোধী মতের দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশে ক্রমাগতভাবে বাধা দিয়ে চলেছে, তখন সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন সরকারের সেই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের গুঁটি হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না। গত দু‘দিনের ঘটনা পরিক্রমায় এটা স্পষ্ট যে, বিরোধী মতের কণ্ঠ স্তব্ধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র প্রেস ক্লাবে বিধি-নিষেধ আরোপের অপচেষ্টা চলছে, যা দু:খজনক ও অনভিপ্রেত। সাংবাদিকরা বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। কোন সাংবাদিক সংগঠন এই গৌরবময় ঐহিত্যের পরিপন্থী তৎপরতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না। অতীতে বহুবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তা সত্ত্বেও কখনো অগণতন্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের পথে হাঁটতে দেখা যায়নি।
সমঝোতা ও পারষ্পরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব পরিচালনার যে ঐতিহ্য রয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।