‘ইসলামী আদর্শকে নারী অধিকারের অন্তরায় বানানো ভান্তিকর’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ মার্চ ২০২২, ১৪:০০, আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২২, ১৪:০২
‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইসলামী আদর্শের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে নারী সমাজের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী প্রফেসর চেমন আরা ও সেক্রেটারি প্রফেসর ডা: হাবিবা চৌধুরী সুইট।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে নারী অধিকার আন্দোলনের নেতৃদ্বয় এ আহ্বান জানান।
তারা বলেন, আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে নারী সমাজ গৃহের বাইরে প্রতিটি পদক্ষেপে নানা রকম সামাজিক অন্যায়, উৎপীড়ন, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার। গৃহের অভ্যন্তরেও পারিবারিক পরিমণ্ডলে দৃশ্য-অদৃশ্য, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শত অবমাননা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। কিন্তু সভ্যতার উৎকর্ষের এই পর্যায়ে এসে নারী সমাজের এই গ্লানিকর অবস্থা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই নারীর অধিকার আদায়ের মাধ্যমে আমাদেরকে এই অশুভ বৃত্ত থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
তারা বলেন, পাশ্চাত্যে নারী প্রগতির প্রধান ধারণা এসেছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও চার্চের পক্ষ থেকে। রেনেসাঁ পরবর্তী ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদ, অষ্টাদশ শতাব্দীর যুক্তিবাদ এবং উদার নৈতিকতার পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য লোকাচারের প্রভাব ছিল কম। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে নারী প্রগতির প্রধান বাধা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে না আসলেও এক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদাসীনতাও কম দায়ী নয়। কেউ কেউ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রধান অন্তরায় মনে করলেও বাস্তবতার সাথে তা মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয় বরং ধর্মীয় জ্ঞানের অপ্রতুলতা, কুপমুণ্ডুকতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপ্রয়োগই এজন্য প্রধানত দায়ী।
নারী নেতৃদ্বয় বলেন, মূলত সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন গৌণ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে উদাসীনতার কারণেই আমাদের সমাজে নারীরা অধিকার বঞ্চিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত। নারী-পুরুষের সমঅধিকারের পক্ষে কথা বলা হয়। কিন্তু সমঅধিকারের ধারণাটা কিছুটা হলেও ত্রুটিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারের ধারণাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ, অধিকার কখনো সমান হয় না। তাই একথা বললে অত্যুক্তি হবার কথা নয় যে, নারী-পুরুষ কর্মে, দায়িত্বে ও অভিজ্ঞানে কেউই কারো সমকক্ষ নয় বরং তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে একে অপরের চেয়ে শ্রেয়তর। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যে সৃষ্টিগত পার্থক্য রয়েছে তা কোনোভাবেই সমান্তরাল করার সুযোগ নেই।
তারা বলেন, ইসলাম নারীকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। একুশ শতকে এসে এর বিচ্যুতিটা রীতিমত চোখে পড়ার মত। অজুহাত উঠেছে সামাজিক বিপর্যয়ের। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমরা এদেশের মুসলিম সমাজেও প্রকটভাবে উপলব্ধি করছি। আমাদের সমাজে মুসলিম নারীদের অবস্থা ঊনিশ শতকে কতটা দুর্বিসহ ছিল - তার সার্বিক চিত্র উঠে এসেছে সমাজ সংস্কারক ও নারী মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার লেখনিতে।
তারা আরো বলেন, ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় - এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু নিরপেক্ষ ও চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইসলামই নারীকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এক্ষেত্রে বিশ শতকের ইসলামী স্কলারগণ নারী অধিকার নিয়ে ইসলামের যথাযথ অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তারা পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমান্তরাল এবং একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
নারী নেতৃদ্বয় বলেন, আমাদের দেশের তথাকথিত নারীবাদীরা নারী সমাজ সম্পর্কে ইসলামের মর্যাদাপূর্ণ ও ইতিবাচক বিষয়ে খুবই উদাসীন। অজ্ঞতাবসত তারা ইসলাম ও ইসলামী আদর্শকে নারী অধিকারের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেদেরকে পুরুষের সমকক্ষ প্রমাণ করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। একথা অনস্বীকার্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে নারী নির্যাতন রোধে এবং সর্বোপরি নারীর অবস্থার উন্নয়নে নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
তারা বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। তাই নারী সমাজকে উপেক্ষা করে কোনোভাবেই জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। অথচ আমাদের সমাজে নারীদেরকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ সকল পেশাতেই নারীরা উপেক্ষার শিকার হচ্ছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে নারীরা আজও চরমভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই নারী সমাজকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার কোনো বিকল্প নেই।
নেতৃদ্বয় নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি