ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : ড. আব্দুর রব
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:৩৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেছেন, মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে সে দেশের ভাষাই তার মাতৃভাষা। জন্মগতভাবে আমরা বাংলাদেশী আর বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার ইতিহাস ও আন্দোলন অত্যন্ত দীর্ঘ। আজকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। আমাদেরকে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘বাংলা ভাষার গৌরবময় ইতিহাস: জাতীয় মুক্তির পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে যুব সমাজকে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে নিজ সন্তানদেরকে বাংলাভাষা চর্চা করতে উৎসাহিত করা। সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য যারা কাজ করছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা উচিৎ। সাথে সাথে ভিনদেশী অপসংস্কৃতির হাত থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, এ দেশে মুসলমানরা বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। সর্বশেষ সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সত্যটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ভাষা মানুষের বিচ্ছিন্নতা দূর করে, পরস্পরকে ঐক্যবদ্ধ করে। কাজেই দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাভাষা চর্চাকে বিকশিত ও উন্নত করাই হবে আমাদের অন্যতম কর্তব্য।
নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: আতিয়ার রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, বিশিষ্ট কবি মোশাররফ হোসেন, লেখক ও গবেষক শাহ আব্দুল হালিম, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজীবী জাহাঙ্গির হোসেন, আদর্শ শিক্ষক পরিষদের নেতা আব্দুল লতিফ, সম্ভাবনার বাংলাদেশের সমন্বয়ক শামসুর রহমান প্রমুখ।
সেমিনারের প্রবন্ধকার ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান বলেন, উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ। ভাষা আন্দোলনে যেমন সব শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় করেছিল, ঠিক তেমনি আজকে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবাইকে দল-মত ও শ্রেণী-পেশার উর্ধ্বে উঠে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই এ জাতির মুক্তি সম্ভব।
বিশেষ অতিথি ডা: আতিয়ার রহমান বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল না, বরং নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র রক্ষারও আন্দোলন ছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান হয়েছে এবং একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেয়েছে।
ব্ক্তা কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এ ভাষার অধিকার রক্ত দিয়ে আমরা অর্জন করেছি। একুশ আমাদের শিখিয়েছে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগ্রাম করতে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আমাদের বাক-স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, একইভাবে আজ ২০২২ সালে এসেও সিকিউরিটি এ্যাক্ট নামে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের আবারো প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের জনগণকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।