এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শরণার্থী গেছে বাংলাদেশ থেকে : ইউএনএইচসিআর
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:২০
করোনাভাইরাস মহামারীর ডামাডোলে বছর দুয়েক চাপা পড়ে ছিল শরণার্থী সমস্যার ইস্যু। তবে আলোচনায় না থাকলেও সংকট থেমে থাকেনি। লকডাউন আর কঠোর বিধিনিষেধে গত বছর বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও ২০২১ সালে তা আবার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ ছুটেছে ইউরোপ অভিমুখে।
এ বছর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি, মাল্টা, গ্রিসের মতো দেশগুলোতে পা রাখার চেষ্টা করেছেন লাখো মানুষ। এদের বড় অংশই আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত বা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে অবাক করা বিষয়, চলতি বছর বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আশ্রয়প্রার্থী বের হওয়া দেশের নাম বাংলাদেশ।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আনুমানিক ১ লাখ ৯ হাজার ৭২৬ শরণার্থী ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছেন। একই সময়ে পূর্ব আটলান্টিক বা কুখ্যাত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৫৪৩ জন। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪২২ শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে ইতালি বা মাল্টা যাওয়ার পথে। এর বাইরে আরো ৯৫৯ জন মারা গেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে স্প্যানিশ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের মধ্যকার বিপজ্জনক রুট পাড়ি দিতে গিয়ে।
ইউএনএইচসিআরের সূত্র দিয়ে মঙ্গলবার আরব নিউজ এই খবর প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়, এ বছর শরণার্থী সংকটে সবচেয়ে বড় অবদান তিউনিসিয়ার। ২০২১ সালে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের প্রায় ২৫ শতাংশই উত্তর-আফ্রিকার দরিদ্র দেশটি থেকে যাওয়া। এরপরেই সবচেয়ে বেশিবার নাম এসেছে বাংলাদেশের। এ বছর ১১ শতাংশের বেশি শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে রওয়ানা দিয়েছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শরণার্থী বেরোনো দেশের তালিকায় বরাবরই আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নাম শীর্ষে দেখা গেছে। তবে গত বছর এ তালিকার শীর্ষ দশে বাংলাদেশ নাম লেখানোর পর অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। এ বছর দেশটি চলে এসেছে তালিকায় আরো ওপরে।
আরব নিউজের খবরানুসারে, ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত ইউরোপ অভিমুখে রওয়ানা দেয়া অন্তত ৬ হাজার ৪৫৫ জন শরণার্থীর যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। এদের মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক লোক মারা গেছেন।
গত মে মাসে তিউনিসিয়া উপকূলে ৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। একটি তেল প্ল্যাটফর্ম আঁকড়ে ধরে তখন কোনোমতে প্রাণে বাঁচেন ৩৩ জন। পরে উদ্ধারকারীরা খুবই অবাক হন, যখন জানতে পারেন, বেঁচে যাওয়া সবাই বাংলাদেশ থেকে গেছেন। তবে ওই লোকগুলো আসলেই বাংলাদেশি নাগরিক কিনা তা পরিষ্কার নয়।
শরণার্থী উৎস দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসার অন্যতম প্রধান কারণ ধরা হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটকে। সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সরকারের চরম দমন-পীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেকেই বঙ্গোপসাগরের ভেতর ভাসানচরের পুনর্বাসনকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
গত আগস্টে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ৪৬ রোহিঙ্গা আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিল নারী ও শিশু। এদের মধ্যে ২০০ জনের বেশি সাগরেই মারা যান।
শরণার্থীদের পুনর্বাসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে এইএনএইচসিআর। তারা জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৭ লাখ শরণার্থীর মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার জনের পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের এ সংস্থাটির ধারণা, ২০২২ সালে অন্তত ১৪ লাখ শরণার্থীর পুনর্বাসনের প্রয়োজন পড়বে।