শ্রমিকের অধিকার আদায়ের মঞ্চ ট্রেড ইউনিয়ন : ডা: শফিকুর রহমান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৯:১০
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষেরা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। শ্রমিকরা রাত-দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। তাদের রক্ত ও ঘামের ওপর উৎপন্ন পণ্য আমরা বিলাসিতার সাথে ভোগ করি। অথচ আমরা একটি বারের জন্য খোঁজ নেই না শ্রমজীবী মানুষরা কিভাবে, কত কষ্টে দিন গুজরান করছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা যে শ্রম দিচ্ছেন তার তুলনায় সামান্যই মজুরি পেয়ে থাকেন। একদিকে কম মজুরি দিয়ে তাদের ঠকানো হচ্ছে, অন্যদিকে সেই সামান্য মজুরিটুকু যথাযথ সময়ে দেয়া হয় না। এমতাবস্থায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকের অধিকার আদায়ের মঞ্চ। ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে মানবিক হতে হবে। শ্রমিকবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে।
শুক্রবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক ভার্চুয়ালি আয়োজিত ‘ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন-২১’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরিউক্ত কথা বলেন। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রধান উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন। এই সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, লস্কর মুহাম্মদ তসলিম, কবির আহমেদ, মুজিবুর রহমান ভূইয়াসহ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে ফেডারেশনের মহানগরী, জেলা ও ট্রেড ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল ইনসাফ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। সকল মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য থাকবে। দেশের মানুষের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন হবে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি নাগরিক কাজ করবে। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার সেই স্বপ্নসাধ আজো পূরণ হয়নি। বরং সমাজে বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যাদের হাত ধরে অর্থনীতির চাকা ঘোরে তারা আজ পদে পদে উপেক্ষিত। সমাজ-রাষ্ট্রে তাদের কোন সম্মান নেই। সামান্য মজুরি দিয়ে তাদের থেকে অধিক কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই মজুরি দিয়ে বর্তমান বাজারে চলা যায় না। তারা এক বেলা খায়, আরেক বেলা উপোস থাকে। সন্তানদের মেধা বিকাশের জন্য স্কুল কলেজে পাঠাতে পারে না। ফলে তাদের সন্তানরা মেধা বিকাশের সুযোগ থেকে বিঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমিক। তাদের সমস্যা দুনিয়াবি কোন মতবাদ দিয়ে সমাধান সম্ভব হবে না। প্রতিটি মতবাদের ত্রুটি রয়েছে। শ্রমিকসহ সমাজ-রাষ্ট্রের এই সমস্যার সমাধান কেবল মাত্র আল কুরআনে নিহিত রয়েছে। আল্লাহর বিধান ছাড়া দুনিয়ার কোন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে না।
‘আল্লাহ মানুষকে সকল প্রাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। মানুষ যে কাজই করুক তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। সুতরাং সমাজ-রাষ্ট্রে কে কোন পদে আসীন এটা আল্লাহর কাছে বিবেচ্য হবে না। বরং যারা নিজেদের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে তারা আল্লাহর কাছে প্রিয় পাত্র হবে। আজকে যারা মেথরের কাজ করছে তাদেরকে সমাজে খুব নিম্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ মেথর ভাইয়েরা যদি এক দিনের জন্য তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে এই শহর-বন্দর অচল হয়ে যাবে। শহরের বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যারা যুগের পর যুগ করে যাচ্ছে তারা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।
এভাবে আরো অসংখ্য কাজ আছে। অসংখ্য শ্রমিক আছে যাদের কাজের মূল্যায়ন আমরা করি না। আমাদেরকে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে খোদার বিধান পূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। তাহলে সমাজ-রাষ্ট্রে প্রকৃত শান্তি নেমে আসবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন শুধু শ্রমিকের স্বার্থ দেখে না। বরং এটি মালিক-শ্রমিকের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এক অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে। শ্রমিক যেখানে কারখানার আয়-উন্নতি বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, সেখানে মালিকের দায়িত্ব হয়ে যায় শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা। তার জন্য সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করা। শ্রমিকের জন্য ভালো খাবার ও পোশাকের যোগান দেয়া, তাদের সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, শ্রমজীবী মানুষদের উপেক্ষা করে সমাজ-রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। বরং রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য শ্রমিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকের অধিকার আদায়ের একটি মঞ্চ। যেখানে শ্রমিক অবহেলিত হয় সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন কথা বলে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি মজলুম শ্রমিক নেতা আ ন ম শামসুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া শিল্প-কলকারখানায় ‘কালাকানুন’ টার্মিনেশন অ্যাক্ট বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করা, শিল্প-কলকারখানার মুনাফায় শ্রমিকদের অংশ প্রদান, রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে তেলের দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি