শ্রমজীবী মানুষকে সহজ ভাষায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিন : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ নভেম্বর ২০২১, ১৮:০৬, আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১, ১৮:০৯
শ্রমজীবী মানুষের কাছে সহজ ভাষায় ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘আজকের দুনিয়ায় সকল অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মূলে রয়েছে মানুষের ইসলাম বিমুখতা। মূলত মানুষ ইসলাম সম্পর্কে না জানার ফলে গোমরাহী পথে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষরা দ্বীনি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তাদের কাছে ইসলামের মহান বাণী কেউ তুলে ধরে না। ফলে এ অঙ্গনের সরল সহজ মানুষগুলো ইসলামের আলোকিত পথ দূরে থেকে যাচ্ছে। তাদেরকে ইসলামে অনুপম সৌন্দর্যের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের কাছে সহজ ভাষায় ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।’
শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত আসন্ন নববর্ষের (২০২২) প্রকাশনাসমূহের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শ্রমজীবী মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুল হালিম।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, লস্কর মুহাম্মদ তসলিম, মুজিবুর রহমান ভূইয়া, এম মনসুর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবুল হাশেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, আব্দুস সালাম, মহিব্বুল্লাহ, দফতর সম্পাদক নুরুল আমিন, প্রচার সম্পাদক জামিল মাহমুদ, আইন সম্পাদক সোহেল রানা মিঠু প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলাম শ্রমজীবী মানুষদের সম্মানিত করেছে। অধিকাংশ নবী-রাসূলরা শ্রমজীবী ছিলেন। আল্লাহর নবী সা: বলেছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু। তারা ধনীদের থেকে ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। স্বয়ং নবী সা: জান্নাতে শ্রমিকদের সাথে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার পাওনা আদায়ের কথা বলেছেন। তাকে সাধ্যের বাইরে কাজ দিতে নিষেধ করেছেন। যদি তেমন দায়িত্ব দিতেই হয়, তাহলে শ্রমিককে তার কাজে সহযোগিতা করতে বলেছেন। শ্রমিকের ব্যাপারে রাসূল সা:-এর এই নীতি পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শিক পন্থা।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে শ্রমিকরা অবহেলিত ও অধিকার থেকে বিঞ্চিত। তাদের ন্যায্য পাওনা দেয়া হয় না। অধিক সময় কাজ করিয়ে নেয়া হলেও তার সঠিক মূল্য পরিশোধ করা হয় না। স্বল্প বেতন দিয়ে তাদের সংসার চলে না। বড় বড় শহরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে তাদের বসবাস করতে হয়। কোনভাবে খেয়ে না খেয়ে শ্রমিকরা তাদের দিন অতিবাহিত করেন। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শ্রমিকদেরকে আদর্শিক পথে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তাদের কাছে ফেডারেশনের দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে। শ্রমিক কল্যাণ যে শ্রমিকদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য কাজ করে, সেটি তাদেরকে বোঝাতে হবে। এজন্য সময়োপযোগী উত্তম কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, নববর্ষের প্রকাশনা ও দাওয়াতী সামগ্রী দ্বীন প্রচারের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২২ বর্ষের জন্য প্রকাশিত ডায়েরী, ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বাণী শ্রমিকের ঘরে পৌঁছে যাবে বলে আমি আশা করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি সম্পর্কে আমাদের শ্রমিকরা জানে না। ফলে যুগের পর যুগ নিস্পেষিত থেকে যাচ্ছে। অথচ ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়িত হলে মালিক, শ্রমিক ও রাষ্ট্র তিন পক্ষই উপকৃত হবে। সামাজিক শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামকে অনুসরণ করতেই হবে। এছাড়া দুনিয়াবাসীর সামনে আর কোন আদর্শিক পথ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাওলানা হারুনুর রশিদ খান বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী শ্রমনীতির সুফল শ্রমজীবী মানুষের নিকট তুলে ধরছে। আমরা শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব লাগিয়ে নয় বরং মালিক-শ্রমিকের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। আমরা চাই একজন শ্রমিক যেন তার প্রাপ্য মজুরি বুঝে পেয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। প্রতিটি শ্রমিক কাজে সততার সাথে নিজের উন্নতির পাশাপাশি মালিক ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের পথে যেন নিয়োজিত থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। প্রেসবিজ্ঞপ্তি