১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

সাংবাদিকতায় নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে আবদুস সালাম আপস করেননি

ভার্চুয়াল আলোচনায় সম্পাদক ও সাংবাদিক নেত্রীবৃন্দ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ও ভাষা সৈনিক মরহুম আবদুস সালাম ছিলেন নির্ভীক ও পথিকৃৎ সাংবাদিক। তিনি তার সাহসী লেখনীর মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের তার মতো নীতি-নৈতিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও মানুষের জন্য দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। তার আদর্শকে ধারণ করতে হবে। আবদুস সালাম, মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরীরা সে সময় কিভাবে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন তা অনুধাবন করতে হবে। তাহলেই সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতার মতো মহান পেশা হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র আয়োজনে অকুতোভয় সম্পাদক আবদুস সালামের ১১১তম জন্মবার্ষিকীতে সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।

বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সম্পাদক এবং বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমদ।

আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, ইকোনমিক টাইমস-এর সম্পাদক শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)’র সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাভিশনের বার্তা প্রধান ড. আবদুল হাই সিদ্দিক, ইংরেজী দৈনিক দি নিউ নেশনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও সাংবাদিক আবদুস সালামের নাতনি ড. শারমিন মূসা, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লোটন একরাম প্রমুখ।

এছাড়া আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজে’র দফতর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বাহারী প্রমুখ।

রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন বলেন, নীতি-নৈতিকতার সাথে আপস করেননি বলে আবদুস সালাম গ্রেফতার ও চাকুরিচ্যুতির মুখে পড়েছেন। তবুও সব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লিখেছেন।
তিনি আরো বলেন, সালাম সাহেবদের সময় সাংবাদিকরা সাদাকে সাদা কালো কালো বলতে পেরেছিল এখন পারে না। এতে সত্যের মৃত্যু হয়। সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকতায় বাধা আসবে, সত্য প্রকাশ করতে দেয়া হবে না। এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এটাই সালাম সাহেবরা শিক্ষা দিয়ে গেছেন।

সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রবীণ এ সাংবাদিক আরো বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মালিকরাই সম্পাদক হয়েছেন। অদৃশ্য শক্তি সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে দাঁড়াতে দেয়নি।

শওকত মাহমুদ বলেন, আবদুস সালাম সাংবাদিকদের পথিকৃৎই ছিলেন না, ছিলেন দার্শনিক। আবদুস সালাম সাংবাদিকতাকে দ্রোহ হিসেবে গণ্য করতেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের সময় অবজারভার পত্রিকায় সম্পাদকীয় লেখার জন্য কারাবরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রসঙ্গে স্বাধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরে শওকত মাহমুদ বলেন, ষাটের দশকে আবদুস সালাম, আবুল কালাম শামসুদ্দিনের মতো প্রতিভাবান সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির শোষণ চিত্র তুলে ধরেন। বর্তমানে তাদের মতো মানুষগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক দল ফ্যাসিবাদের সমর্থক, আরেক দল ফ্যাসিবাদের বিরোধী। সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের মধ্যেও এ বিভাজনের ছায়া পড়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশ এখন আফগানিস্তান ও ভূটানেরও নিচে। বর্তমান সময়ে আবদুস সালামের মতো সাহসী সাংবাদিকের খুবই প্রয়োজন।

আবদুস সালাম প্রতিবেশী ছিলেন উল্লেখ করে শওকত মাহমুদ বলেন, অত্যন্ত সাদামাটা ও সরল জীবন যাপন করতে আবদুস সালাম।

ড. আবদুল হাই সিদ্দিক বলেন, আবদুস সালাম ছিলেন প্রকৃত সাহসী ও নির্ভীক সম্পাদক। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের মধ্যেও সাহসের সাথে বাঙালির প্রতি বৈষম্যের কথা লিখে গেছেন। এ জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছে। পিআইবির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান হিসেবে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজটি করে গেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। আমলাদের নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছিল তাকে।

মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, সাহসী সম্পাদক আবদুস সালামের সম্পাদনায় বাংলাদেশ অবজারভার হয়ে উঠেছিল পূর্ববাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। আবদুস সালাম অনেক গুণী সাংবাদিক তৈরী করে গেছেন, যারা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছেন।

এ সময় মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনে বলেন, আজকে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। গোটা গণমাধ্যমে দুর্দিন চলছে। এ সময়ে আবদুস সালামের মত সাহসী সম্পাদকের খুবই প্রয়োজন।

ইলিয়াস খান বাংলাদেশে সাহসী সাংবাদিকতাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে আবদুস সালামদের মত সাহসী সাংবাদিকদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে বেশি বেশি করে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, আবদুস সালাম অপরিসীম সাহসিকতা দিয়ে সাংবাদিকতা করে গেছেন। তিনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছেন। নিজেকে সাংবাদিকতার কিংবদন্তী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement