আরএসএফের প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কজনক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুলাই ২০২১, ১৪:৫৪, আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১, ১৬:২০
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স-আরএসএফ) ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ শীর্ষক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম স্থান পাওয়াকে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে মনে করছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলেসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, রিপোর্টার্স ইউদাউট বর্ডার্স ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি ৩৭ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের যে তালিকা ৫ জুলাই প্রকাশ করেছে, তাতে দু’জন নারী রয়েছেন। তাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তালিকাটিতে দু’টি ভাগ করা হয়েছে। লাল ও কালো। সবচেয়ে খারাপ সংবাদমাধ্যম শিকারি ১৬ জনের ‘কালো’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আরএসএফ তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। কতটা ভীতিকর ও নাজুক পরিবেশে থাকলে আরএসএফের প্রতিবেদনটি পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশ করতে সাহস পায়নি। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএফইউজে ও ডিইউজে সাংবাদিক নেতারা আরো বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন আরএসএফের মুক্তগণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২১তম। ক্রমাগতভাবে সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণমাধ্যমের ওপর খড়গ বাড়তে থাকায় চলতি বছর মে মাসে প্রকাশিত মুক্তগণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে এসেছে ১৫২-তে। ২০১০ সাল থেকে একের পর এক ভিন্নমতের সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দিয়ে সরকারের সমালোচক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা চালিয়ে গোটা গণমাধ্যমে যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে তারই আংশিক প্রতিফলন হয়েছে আরএসএফ প্রকাশিত ইনডেক্সে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক থেকে শুরু করে এমন কোনো সংবাদমাধ্যম নেই যার সম্পাদক ও একাধিক সাংবাদিককে মামলার জালে জড়ানো হয়নি। বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সম্পাদককে গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন ও দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় ঠুনকো অজুহাতে। ফটো সাংবাদিক কাজলসহ কয়েকজন সাংবাদিক স্বাধীন মত প্রকাশ ও বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশের অপরাধে গুমের শিকার হয়ে দীর্ঘ দিন পর জীবন ভিক্ষা নিয়ে ফিরে আসেন। সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও সিনিয়র সাংবাদিক সাদাত হোসেন ৮ মাস যাবত কারাবন্দী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিমাসে গড়ে ছয়জন করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও অনেককে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।
এসব ঘটনা গণতান্ত্রিক ও মুক্তগণমাধ্যমের পরিচায়ক নয় বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিএফইউজের দফতর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা অবিলম্বে ভয়-ভীতিহীন মুক্ত সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মত প্রকাশের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দেয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল ও কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।