১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
টিআইবির গবেষনা ফলাফল

আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জলবায়ু প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ

আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জলবায়ু প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ - প্রতীকী ছবি

# অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে
#সাবেক মন্ত্রীর এপিএসকে ১০ শতাংশ অগ্রীম ঘুষ দিতে হয়েছে


জলবায়ু পরিবর্তনের সাত প্রকল্পে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতায় ও আঁতাতের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ/অপচয় করা হয়েছে। আত্মসাতের পরিমাণ ওই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নকৃত ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রায় ৫৪.৪ শতাংশ অর্থই, যা প্রায় ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে। সংস্থাটি বলছে, স্থানীয়ভাবে প্রকল্পের চাহিদা এবং গুরুত্ব বিবেচনা না করে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন করা হয়েছে। ৭টি প্রকল্পের সবগুলোই রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদন করা হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি প্রকল্পের অনুমোদনে তৎকালীন একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারিকে ১০শতাংশ প্রকল্প অর্থ অগ্রিম ঘুষ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার আয়োজিত বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি এই মন্তব্য করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন, সংস্থাটির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মসূচী ব্যবস্থাপক, এম. জাকির হোসেন খান।

টিআইবি বলছে, গবেষণার আওতাভূক্ত ৭টি প্রকল্পের সবগুলো প্রকল্পেই বিবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র বিদ্যমান। এক্ষেত্রে ৭টি প্রকল্পের সবগুলোই রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদন করা হয়েছে; যার মধ্যে ৩ টি প্রকল্পের অনুমোদনে তৎকালীন একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারিকে ১০শতাংশ প্রকল্প অর্থ অগ্রিম ঘুষ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। একটি প্রকল্পের আওতায় ৬৫০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও ভোক্তা পর্যায়ে দৈনিক মাত্র ৫০ কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্বাহী আদেশ না থাকায় বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। যেখানে প্রকল্পটির আওতায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার সুযোগ না থাকায় অবমুক্তকরণের নামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। সড়কবাতি সংক্রান্ত দুটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথভাবে যাচাই না করেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনসহ প্রকল্প দুইটি অনুমোদন দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, একই সময়ে একই ধরনের সক্ষমতার প্রকল্পদুটি অনুমোদিত হলেও প্রকল্প দুটির আওতায় স্থাপিত সড়কবাতির ইউনিট প্রতি মূল্যের পার্থক্য প্রায় ১ লাখ ১ হাজার টাকা। এই দুটি প্রকল্পের মধ্যে যেই প্রকল্পে সড়কবাতির ইউনিট মূল্য সবচেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই প্রকল্পটির প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন, অনুমোদন, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার নির্বাচনে একজন মন্ত্রীর একজন সাবেক সহকারি প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রকল্পটির মেয়াদান্তের পূর্বেই সেই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক সড়কবাতি অকার্যকর হয়ে গিয়েছে।

প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ভিত্তিক দুর্নীতি হলো, জলবায়ূ পরিবর্তন প্রকল্পে টিআইবি বনায়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৩.২৮ কোটি টাকার ৪০শতাংশ তহবিল আতœসাৎ, প্রায় ১ লাখ চারাগাছ কম লাগানোর অভিযোগসহ প্রকল্পের আওতায় ক্রয়কৃত যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামপ্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় হতে উধাও, নি¤œমানের চারা রোপণসহ, প্রকল্পের উল্লিখিত কার্যক্রমের আংশিক বাস্তবায়ন ও ব্যয় দেখিয়ে বরাদ্দকৃত তহবিলের অংশবিশেষ আত্মসাৎ, প্রকল্পের ৫০শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে বাকি অর্ধেকের মতো তহবিল আত্মসাৎ, ২৮ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন একর প্রতি ১১ লাখ টাকা অতিরিক্ত দামে ৪ একর জমি ক্রয়সহ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন এবং ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনের মাধ্যমে ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাত।


আরো সংবাদ



premium cement